Irumbu Thirai Movie Review: এই প্রযুক্তির যুগে কতটা নিরাপদ আপনি?
ছবি: ইরমবু থিরাই - Irumbu Thirai (2018)
পরিচালক: পি.এস মিথরান
ইন্ডাস্ট্রি : তামিল (ইন্ডিয়া)
জনরা : একশন, থ্রিলার, টেকনো থ্রিলার
অভিনয়ে: বিশাল কৃষ্ণ রেড্ডি, অর্জুন সারজা, সামান্তা রুথ প্রভু প্রমুখ।
প্রযোজনা: বিশাল ফিল্ম ফ্যাক্টরি
মুক্তি: ১১ মে ২০১৮
বক্স অফিস: ব্লকবাস্টার হিট
বাজেট: ১৪.৫ কোটি রুপি
আয় : ১০৫ কোটি রুপি
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৬/১০
ব্যক্তিগত রেটিং: ৬/১০
Irumbu Thirai Movie Review: এই প্রযুক্তির যুগে কতটা নিরাপদ আপনি? |
ইরমবু থিরাই : এই প্রযুক্তির যুগে কতটা নিরাপদ আপনি?
প্রারম্ভ: আমরা হাজার চাইলেও প্রযুক্তির বিকাশকে অস্বীকার করতে পারিনা। বর্তমানে ১টি শিশু জন্মাবার আগ থেকে শুরু করে একজন বৃদ্ধের মৃত্যু পর্যন্ত কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির সঙ্গে কানেক্টেড। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় গত ২৫ বছরে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ বিস্তার ঘটেছে। আর এতে শহর থেকে গ্রাম, অর্থাৎ প্রায় সব স্থানের মানুষই কোনো না কোনো ভাবে উপকৃত হয়েছে এবং হচ্ছে।
এই প্রযুক্তির দুনিয়ার সব থেকে বড় নেয়ামত ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন। যা ২৪ ঘন্টাই আমাদের প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। কোনো কিছু কিনতে গেলে ইন্টারনেট, কোথাও ঘুরতে যাবেন- সেটার জন্যও এই ইন্টারনেট। বাচ্চার ডায়াপার কিংবা আপনার জন্ম নিরোধক লাগবে, সেখানেও ইন্টারনেট। প্রেমিক/প্রেমিকা/বন্ধু/বান্ধবী যার সাথেই দেখা করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, খেতে যাচ্ছেন যাইই করছেন, সঙ্গে সঙ্গে ছবি তুলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ছেড়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অথবা রেখে দিচ্ছেন ড্রাইভের গোপন কোনো ফোল্ডারে, তাও আবার ইন্টারনেট ব্যবহার করেই।
ইন্টারনেট কম বেশি সবারই কাজে লাগছে। ইন্টারনেট ছাড়া যেনো আমরা প্রতিটা মূহুর্ত অচল। এমনকি ঘুমোতে গেলেও ইন্টারনেটে গান ছেড়ে ঘুমোতে যাই। হাজী সাহেব থেকে পাজি সাহেব সবার কাছেই উপভোগ্য বিষয়টা। এমন হাজারো উপকৃত হওয়ার ফিরিস্তির মাঝে একবারও কি ক্ষতিকর বিষয়গুলো ভেবেছেন? একবার ভেবে দেখেছেন এই ইন্টারনেটের জন্যই প্রতিদিন কতো মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে? কত মানুষ নিঃস্ব, অসহায় হয়ে জীবন্ত লাশের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে?
আপনি বা আপনারা কি কখনো খেয়াল করছেন, সবসময় আমাদেরকে কেউ দেখছে! আমাদের চলা ফেরা, আলাপ আলোচনা কেউ না কেউ আড়ি পেতে শুনছে। কখনো কি খেয়াল করেছেন যে, আপনি বন্ধু বা কারো সাথে কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করছেন (হোক সেটা সামনাসামনি), আর তারপর আপনার স্মার্টফোনের বিভিন্ন এপ্সে সেই বিষয় বা পণ্যের বিজ্ঞাপন শো করছে? এর মানে হলো, আপনার স্মার্টফোনটা অগোচরেই আপনার সকল তথ্য সংগ্রহ করছে। আর এসব তথ্যই অনেকে হ্যাক করে নিজেদের অসাধু কাজে ব্যবহার করছে।
ভারতে বেশ কিছু স্ক্যা*ম হয়েছে, যা স্মার্টফোন বা ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং ব্যবহারকারীদের অনেককে পথে বসিয়েছে। বাংলাদেশও এমন ঘটনা ঘটেছে নিয়মিত। এমনই একটি স্ক্যাম ও সাইবার নিরাপত্তার ঘাটতি নিয়েই তৈরি হয়েছে ইরমবু থিরাই নামের সিনেমাটি।
গল্প সংক্ষেপ: ইউরোপে সেটেল্ড হওয়ার লক্ষ্য মিলিটারি অফিসার কাথিরাবানের। সে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারেনা। তাই তার অফিসারের নির্দেশে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রথি দেবীর কাছে যান। এরপর রথির কথামতো কাথিরাবান তার পরিবারের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক ঠিক করতে গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে বোনকে তার প্রেমিকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা শুরু করে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় ছেলে পক্ষের দাবি অনুযায়ী স্বর্ণ দেয়া নিয়া। যা দিতে খরচ পড়বে ১০ লাখের মতো।
কিন্তু কাথিরাবানের হাতে কোনো টাকাই নেই।কারো কাছ থেকে কোনো লোনও করতে পারছে না সে। তাছাড়া ধার নেয়াটা তার পছন্দ নয়। কারণ ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে তার বাবা প্রচুর ধার দেনা করে তা আর শোধ করতে পারেনি। এটাই মূলত বাবার সাথে তার দূরত্বের কারণ। এবার সিদ্ধান্ত হলো ব্যাংঙ্ক লোন নিয়ে বোনের বিয়ে দেয়া হবে। এখান থেকেই শুরু 'ইরমবু থিরাই' ছবির মূল গল্প। বাকিটুকু সিনেমাটি দেখার জন্য তোলা রইলো।
চরিত্র: ছবিতে মেজর কাথিরাবান চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন বিশাল কৃষ্ণ রেড্ডি। ভিলেনের চরিত্রে দুর্দান্ত করেছেন অর্জুন সাজ্জা। আর মনোরোগ চিকিৎসকের চরিত্রে ছিলেন সামান্থা রুথ প্রভু। তার অভিনয় বরাবরই দারুণ। ছবিতে বলতে গেলে প্রত্যেকটি চরিত্রই ভালো অভিনয় করেছেন।
আমার (শিমুল চৌধুরী ধ্রুব) পর্যালোচনা : ছবিটি দর্শককে আনন্দ দিয়েছে, বিনোদন দিয়েছে, সচেতনতার বার্তা দিয়েছে। বিনিময়ে তকমা পেয়েছে ব্লকবাস্টার। কিন্তু শিল্পের নিরিখে কিছু বিষয় না থাকলেই বরং এটি সমালোচনার বাইরে বেড়োতে পারতো। বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিলো এনজি শট। বেশ কিছু দৃশ্যে পার্ফেক্ট শট ধারণ করা হয়নি অথবা ব্যবহার করা হয়নি। এডিটিংটাও ছিলো দূর্বল।
সব থেকে বড় খটকা হচ্ছে গল্পের শুরু। যেখানে দেখানো হয়েছে নায়ক দেশের বাইরে সেটেল্ড হতে চায়। আর সে কারণে বিদেশি মেয়েদের পটিয়ে বিয়ে করতে চায়। প্রথম হাফ আওয়ার এই বিষয়টা দর্শককে বারবার শোনালেও মূল গল্পে এর কারণ বা সম্পৃক্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। আমার মনে হয়েছে হালকা কমেডি দেয়ার জন্য বিষয়টাকে জোর করে স্কৃপ্টে ঢোকানো হয়েছে। আর নায়িকা বিষয়টা সিনেমায় রাখতে হয়, তাই সামান্থাকে রাখা হয়েছে। পরিচালক মশাই যেহেতু নায়িকা চরিত্রটা রেখেছেনই, সেহেতু এই চরিত্রকে গল্পে আরো কিছু স্পেস দিতে পারতেন।
এছাড়াও ছোট ছোট অনেক ক্যারেক্টারের ক্যারেক্টর ডিজাইনটাই ঠিক ছিলো না। টানা দু বছর সিনেমাটা নিয়ে কাজ করার পরও যদি এমন গ্যাপ থাকে তাহলে সত্যিই দুঃখজনক। অবশ্য এই সিনেমার মাধ্যমেই নির্মাতা হিসেবে অভিষেক হয়েছে পি.এস মিথরানের। ডেভিউ সিনেমা হিসেবে ভুলগুলো ক্ষমা করাই যায়।
ছবি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, সমালোচনা করা যায়। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে সচেতনতা তৈরির এই চেষ্টাকে সাদুবাদ জানাতেই হয় পরিচালক, প্রযোজক ও ইরমবু থিরাই'র সকল কলাকুশলীদের।
ক্লাইম্যাক্স/শিমুল চৌধুরী ধ্রুব