Mostofa Sarwar Farooki - কাঁদলেন ফারুকী!
![]() |
Mostofa Sarwar Farooki - কাঁদলেন ফারুকী! |
কাঁদলেন ফারুকী!
বাংলাদেশের সিনেমা যাদের কাঁধে ভর করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তার প্রথম সিনেমা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতগুলো তিনি নির্মাণ করেছেন সেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটি বিভিন্ন বাহানায় প্রথমে আটকে দিয়েছিলো সেন্সর বোর্ড। যদিও পরবর্তীতে নানা সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে সিনেমাগুলোর ছাড়পত্র প্রদান করে বোর্ডটি।
এমন একজন খ্যাতিমান নির্মাতার সিনেমা অবান্তর অযুহাতে বারবার আটকে দেয়াটা লজ্জার, এমনটাই মনে করেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। সেন্সর বোর্ডের এমন কর্মকাণ্ড দেশের সিনেমা শিল্পের জন্য চরম বাঁধা বলেও বিভিন্ন সময় আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্ট জনেরা। কিন্তু তাতেও শুধরায়নি সেন্সর বোর্ড। বরং মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ দীর্ঘদিন ধরে নানান তাল-বাহানায় আটকে রেখেছে তারা।
এই সিনেমা ও সেন্সর বোর্ডকে কেন্দ্র করে এবার কাঁদলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নির্মাতা ফারুকী। বোর্ডের বিষয়টি নিয়ে ভেতরে চাপা ক্ষোভ ছিল তার। অভিমানে মনে মনে বহুবার দেশত্যাগের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি। মনের সেই ক্ষোভের কালো মেঘ ভেঙে ১৪ নভেম্বর রাতে বৃষ্টি ঝরল তার দু’চোখ বেয়ে। তবে তার এই অশ্রু কোনো কষ্টের কারণে নয় বরং কৃতজ্ঞতার আনন্দের। সামাজিক মাধ্যমে তেমন কথাই জানালেন ফারুকী।
ইতোমধ্যে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়েছেন শতাধিক সংস্কৃতিকর্মী। সে ধারাবাহিকতায় ১৫ নভেম্বর এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তারা। সেখানে বলা হয়, সিনেমা-নাটক-সংগীত ও শিল্প-সংস্কৃতির এমন নানা ক্ষেত্রে, নানা সময় হাজির করা হচ্ছে বহুমুখী বাধা, যা নিয়ে তারা সবাই উদ্বিগ্ন। মঙ্গলবার বিবৃতিটি সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ।
‘শনিবার বিকেল’ প্রসঙ্গে শতাধিক সংস্কৃতিকর্মীর উদ্বেগের বিষয় নজরে আসতেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিক্রিয়া জানালেন ফারুকী। তিনি লেখেন, “এখন আর লুকাতে চাই না। আমি মানুষটা একাকিত্বকে মৃত্যুর মতো ভয় পাই। গত তিন বছর আমার প্রচন্ড অভিমান হয়েছিল আমার সহযোদ্ধাদের ওপর, বাংলাদেশের ওপর। ‘শনিবার বিকেল’কে কেন্দ্র করে আমার ওপর যে অন্যায় করা হচ্ছিল তা কেবল আমাকে এবং আমার বউকেই (নুসরাত ইমরোজ তিশা) একা একা বইতে হচ্ছে ভেবে কত রাত যে মনে মনে অভিমানে দেশ ছেড়ে চলে গেছি তার ইয়ত্তা নাই। কত রাত যে ঘুমাতে পারি নাই, হিসাব নাই।”
ফারকী লেখেন, “কালকে রাতেও আমি ঘুমাতে পারি নাই। তবে কষ্টে না, কৃতজ্ঞতার আনন্দে। মানুষের হৃদয়ের জন্য কৃতজ্ঞতার চেয়ে ভালো কোনো ওষুধ আজও আবিষ্কার হয় নাই। কাল রাত সিডনি সময় তিনটায় যখন ঘুমাতে যাই তখনও বাচ্চু ভাই, পিপলু ভাই, অমিতাভ, জুলহাজরা হয়তো আমাদের বন্ধুদের ফোন দিয়ে যাচ্ছে ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে বিবৃতিতে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য। আর আমি ঘুমাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার চোখের পাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাত হয়ে শুয়ে যাতে তিশা টের না পায়। ও আমার মেয়েকে ছড়া শোনাচ্ছে।”
শিল্পীদের এই একাত্মতা আগামী দিনে আরও শক্তি যোগাবে পাশাপাশি এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস ‘টেলিভিশন’ নির্মাতার। তার ভাষ্যে, “সব সময় তো এরকম হয় না যে আমরা আমাদের জড়তাকে ঠেলে একটা কোনো উদ্যোগ নিতে পারি, এক সাথে। সেই হিসাবে আজকের দিনটা আমাদের দেশের শিল্পীদের জন্য একটা মনে রাখার মতো দিন। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবিতে ১৩০ জন শিল্পী একটা বিবৃতি দিয়েছেন যেটা হয়তো কালকে পত্রিকায় দেখবেন সবাই। আপনি যদি নামের লিস্ট দেখেন, তাহলে বুঝবেন কেন এটা আমাদের জন্য, আমাদের পরের জেনারেশনের জন্য একটা বিশেষ মানে বহন করে। এখানে এমন মানুষেরা আছেন যাদেরকে আপনি নিয়মিত বিবৃতিতে খুঁজে পাবেন না। এখানে মূল ধারা-বিকল্প ধারা-নতুন ধারা-পুরাতন ধারা নানা মত-পথের মানুষ আছেন। আমাদের মত ভিন্ন হতে পারে, পথ ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে আমরা এক। আমাদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে আমরা এক। এখন আমরা জানি, আমরা যখন এক হয়েছি, আর কোনো কিছুই ‘আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’!”
ফারুকীর বিশ্বাস, আপিল কমিটি আগামী পরশু সুবিবেচনার পরিচয় দেবে। শিগগির ‘শনিবার বিকেল’ দর্শকদের কাছে যেতে পারবে। পাশাপাশি পোস্টে সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গুলশানে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’ ছবিটি। এতে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইয়াদ হুরানি প্রমুখ।
হাঙ্গামা/ধ্রুব