Mosharraf Karim : যেভাবে উত্থান হলো মোশাররফ করিমের
মোশাররফ করিম যেভাবে জনপ্রিয় হলেন, জানালেন ফারুকী |
মোশাররফ করিম যেভাবে জনপ্রিয় হলেন, জানালেন ফারুকী
বাংলাদেশের শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় তারকা মোশাররফ করিম। তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অভিনয় করেছেন নানামাত্রিক চরিত্রে। শিল্পগুনে গুণী এই মানুষটি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। সাথে দেশের নাটক ও চলচ্চিত্রকে করেছেন সমৃদ্ধ। বহুল জনপ্রিয়তায় দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে কাজ করেছেন দেশের বাইরেও। টালিউডেও তৈরি করেছেন অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী। আজ ২২ আগস্ট (সোমাবার) বাংলা শোবিজের এই উজ্জ্বল তারকার জন্মদিন।
মোশাররফ করিম তার ক্যারিয়ারের শুরুতে মঞ্চে অভিনয় করতেন। টেলিভিশন নাটকে আসেন ১৯৯৯ সালে। কিন্তু প্রধান চরিত্রে আসতে সময় লেগেছে অনেক বছর। প্রধান চরিত্র হিসেবে তিনি পরিচিতি পান ‘ক্যারম’ নাটকের মাধ্যমে। এটি নির্মাণ করেছিলেন বাংলাদেশের তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ নাটকে মোশাররফ করিমকে নেয়ার সময় অনেক ভাবনা চিন্তায় পড়তে হয়েছে ফারুকীকে। কারণ তখন মোশাররফকে তেমন কেউই চিনতো না।
কিন্তু তার প্রতিভার উপর শতভাগ আস্থা ছিলো ফারুকীর। সেই বিশ্বাসে ভর করেই ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন তিনি। আর তার বিশ্বাসের দামও রেখেছেন মোশাররফ করিম। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি। একের পর এক জনপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন। নিজের স্বাক্ষর রেখেছেন চলচ্চিত্রেও। বরেণ্য এই অভিনেতার উত্থানের গল্প বললেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
মোশাররফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষে সামাজিক মাধ্যমে একটি দীর্ঘ পোস্ট দেন ফারুকী। সেখানেই দেড় যুগ আগের অতীত স্মৃতিই রোমন্থন করলেন এই নির্মাতা। সেই পোস্টে তিনি জানালেন ‘ক্যারম’এ কিভাবে যুক্ত হয়েছিলেন মোশাররফ করিম আর কীভাবে তিনি ওই নাটক বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সেই পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘‘আমি বাংলাদেশে যাদের সাথে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী, মোশারফ করিম, নুসরাত ইমরোজ তিশা, অপি করিম, তাসনিয়া ফারিন, শাহীর হুদা রুমি -এই কয়জন অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাগুলা নিয়া মাঝে মধ্যে লিখতে ইচ্ছা করে। পরে আর লিখা হয় না। আজকে মোশারফ করিমের জন্মদিন উপলক্ষ্যে মনে হইলো এক কিস্তি লেখা যায়। এভাবে এক এক করে চঞ্চল ভাই, তিশাসহ সবার জন্মদিনে একটা করে লেখা চেষ্টা করতে চাই।মোশারফ করিমের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ক্যারম! ক্যারম কাজটা মূলত দুইটা জিনিসের অনুপ্রেরনায় বানানো। প্রথমটা হলো ছোটবেলায় ক্যারমে আমার নিদারুন ব্যর্থতা। মাসুদ, বাবলু, এমনকি জাহাঙ্গীরের কাছেও হারতাম। কিন্তু পরাজয়টা কখনোই মানতাম না। দ্বিতীয় অনুপ্রেরনা হচ্ছে আমাদের শুটিংয়ের বাড়ীর ক্যারম টুর্নামেন্ট। আমি আর আমরা সব ভাই-বেরাদর এক সাথে থাকতাম সেখানে- এটা সবাই জানেন। সেই আবাসিক ক্যাম্পে আমরা আবিষ্কার করি কচি খন্দকার মোটামুটি আমার ছোটবেলার বুড়ো ভার্সন। তখন আমরা প্রতি খেলায় হারার পর কচিকে অত্যাচার করার নানা সৃজনশীল উপায় আবিষ্কার করি। এবং কচি খেপেখুপে প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। আমি ঠিক করলাম এই সব নিয়েই ক্যারম নামে একটা টেলিফিল্ম বানাবো। এবং কচি খন্দকারের প্রতি অত্যাচারের প্রতিদান হিসাবে তাকে স্ক্রিপ্ট রাইটার ক্রেডিট দেই। যদিও স্ক্রিপ্ট লেখা সেশনের সাথে তার আদতে কোনো সংস্পর্শ ছিলো না।তখন আমি স্ক্রিপ্ট লেখি সোফায় শুয়ে শুয়ে। লেখি না আসলে, দৃশ্য বলি! মাহমুদ আর সুজন সেটা কাগজে কপি করে। স্ক্রিপ্টের মাঝ পর্যায়ে মোশারফ করিম আসেন আমাদের ক্যাম্পে। তাকে কাস্ট করার পর আমার উপর চাপ বেড়ে যায়। একজন সাংবাদিক ফোন করে বললেন, বস, আপনি শিওর উনি পারবেন? উনি কিন্তু প্রমিনেন্ট কেউ না। আমি বললাম, হি উইল বি প্রমিনেন্ট প্রেটি সুন। সেই সাংবাদিক আমার ফ্রেন্ডলিস্টেও আছেন।তারপর শুটিংয়ে যাই কুমিল্লায়। প্রথম দিন উনি খুবই চাপে ছিলেন। কারন নতুন ইউনিট, নতুন কার্যপদ্ধতি। আমি তখন কৌশলে কম চাপওয়ালা দৃশ্যগুলা করতে থাকি। আর উনাকে আমার সিস্টেমের মধ্যে ধীরে ধীরে ঢোকাতে থাকি! এটা একটা প্রক্রিয়া যেটা শুধু রিহার্সেল করে সম্ভব না। এটা হচ্ছে একটা হোলিস্টিক অ্যাপ্রোচ। যেখানে আমরা আলোচনা করি কবিতা নিয়ে, রাজনীতি নিয়ে, দেশ নিয়ে। এইসব করতে করতে কখন যে আলগোছে আমরা একজন আরেকজনের মাথার ভেতরে ঢুকে বসে যাই। এই ঢোকাটা হয়ে গেলে, বাকীটা তো ইশারায় হয়ে যায়।ক্যারম আর ৪২০’র পর ঐ সাংবাদিক ভাইটাই আমাকে এক অনুষ্ঠানে বলে, না বস, মোশারফ ইজ আ জিনিয়াস। আজকে সবাই জানে হি ইজ আ জিনিয়াস। দীর্ঘায়ু হন মোশারফ ভাই। আর ভালো ভালো কাজ করেন। ইউ হ্যাভ আ লট টু অফার।’’
হাঙ্গামা/ধ্রুব