Mosquitoes : মানুষকে কিভাবে খুঁজে পায় মশা?
মানুষকে কিভাবে খুঁজে পায় মশা? |
মানুষকে কিভাবে খুঁজে পায় মশা?
পৃথিবীর সর্বোচ্চ বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী হচ্ছে মানুষ। আর এই মানুষই ধরাসায়ী হয় অতি ক্ষুদ্রতম প্রাণী মশার কাছে। এই প্রাণীর কামড়ে জন জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি এতে চিকোনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুসহ নানা রোগে আক্রান্তও হতে হয়। পৃথিবীতে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে মশার বিচরণ নেই। মশার কয়েল, মশারি কিংবা ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও এদের কামড় হতে রক্ষা পাওয়া যায়না। মানুষ মশার কাছ থেকে যত দূরেই পালাক না কেনো, এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি ঠিকই মানুষকে খুঁজে বের করে ফেলে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে মানুষের মতো এতো বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণীকে কিভাবে খুঁজে পায় মশা? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়েই হাঙ্গামা২৪-এর আজকের এই প্রতিবেদন।
পৃথিবীর সকল আবহাওয়াতেই মশার বিচরণ। পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে সাথে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মশা। এমনকি আর্কটিকার মতো হিম শিতল ঠান্ডা জায়গাতেও রয়েছে এরা। যারা কিন্তু বরফের ভেতরেও দিব্বি বেচে থাকতে পারে। মশার ভেতর মানুষের মতোই রয়েছে স্ত্রী-পুরুষের মতো ভিন্ন লিঙ্গ। তাদেরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জীবন প্রক্রিয়া। যেমন পুরুষ মশা কখনোই রক্ত পান করেনা। তারা বিভিন্ন গাছের ফুলের মধু, ফলের রস বা গাছের মিষ্টি নির্যাস খেয়ে জীবন বাচায়।
এদিকে স্ত্রী লিঙ্গের মশা ফুলের মধু, ফলের রস খাওয়ার পাশাপাশি পান করে মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীর রক্ত। তারা মূলত রক্ত খায় তাদের বংশবিস্তারের জন্যই। মশার ডিম্বাশয়ে ডিম উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয় মানুষ বা প্রাণীর রক্ত। তাই স্ত্রী মশা মানুষ বা অন্য রক্তসম্পন্ন প্রাণীদের রক্ত পান করে। তবে এই স্ত্রী মশারা তাদের চোখ দিয়ে বেশি দূরে দেখতে পায়না। তাহলে তারা মানুষকে কিভাবে খুঁজে বের করে?
পুরুষ মশাদের চেয়ে স্ত্রী মশাদের রয়েছে কিছু বাড়তি ক্ষমতা। তাদের রয়েছে একটি সংবেদনশীল শুঁড় বা অ্যান্টেনা। এই অ্যান্টেনাতে রয়েছে মশাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়, তাপ ইন্দ্রিয় ও শ্রবণ ইন্দ্রিয়। এই অ্যান্টেনার মাধ্যমেই মানুষের শরীরের তাপ, ঘাম এবং নিঃশ্বাসের কার্বনডাইঅক্সাইডকে এরা নিশানা হিসেবে ব্যবহার করে। এভাবেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যেও মশারা মানুষকে খুঁজে পায়। তাছাড়া আলোতে মশারা তাদের চোখ ব্যবহার করেও মানুষের কাছে পৌছাতে পারে।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, মশার অ্যান্টেনাতে বিশেষ একধরনের অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর বা ঘ্রাণের সংবেদন রয়েছে। যা দিয়ে এটি ঘামের রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করে মানুষকে সহজেই খুঁজে পায়। কিন্তু ষাটের দশকের বিজ্ঞানীরা শুধু জানতেন, মানুষের দেহের ঘাম এবং নিঃসৃত ল্যাকটিক অ্যাসিড মশাকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু কীভাবে এগুলি মশার দেহে সংবেদনশীল হয়, তা জানা ছিল না।
প্রায় চার দশক ধরে ধরে বিজ্ঞানীরা এই প্রক্রিয়াটির সন্ধান করেছেন। বিজ্ঞানীরা মশার দেহের এই বিশেষ অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টরটি শনাক্ত করে ফেলেছেন যা মানুষের ঘামের গন্ধ চিহ্নিত করতে দায়ী। এ রিসেপ্টরটি আয়োনোট্রপিক রিসেপ্টর নামে পরিচিত। যা ত্রিশ ফুটের বেশি দূর থেকেও মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অস্তিত্ব বুঝতে পারে। এই গন্ধ অনুসরণ করে এবং খুব কাছাকাছি এলে মানুষের শরীরের ঘাম এবং তাপও শনাক্ত করতে পারে। এরপর এটি মানুষের শরীরে বসে, চামড়ার ওপরে একটি উপযুক্ত স্থান বাছাই করে এবং বিশেষ সূচ ঢুকিয়ে রক্ত শুষে নেয়।
হাঙ্গামা/ধ্রুব