Kaiser : মন ডাইভার্ট করতে 'কাইজার' দেখলাম

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম 'হইচই'এ মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি ওয়েব সিরিজ 'কাইজার'। মুক্তির পর থেকেই ব্যপক আলোচনায় রয়েছে থ্রিলার ভিত্তিক সিরিজটি। এটি নির্মাণ করেছেন আলোচিত পরিচালক তানিম নূর। এ সিরিজে অভিনয় করেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো, অভিনেত্রী দীপান্বিতা মার্টিন, স্বাগতা, রিকিতা নন্দিনী শিমু, ইমতিয়াজ বর্ষণ, সৌম্য জ্যোতি, মেহরান সানজানা, শিশুশিল্পী ঋদ্ধিসহ আরো অনেকেই। আলোচিত এ সিরিজটি নিয়ে আলোচনা করেছেন স্বনামধন্য লেখিকা লীনা পারভীন। হাঙ্গামা২৪-এর পাঠকদের জন্য তার আলোচনামূলক নিবন্ধটি হুবহু তুলে ধরা হলো। 



মন ডাইভার্ট করতে 'কাইজার' দেখলাম || লীনা পারভীন


একে বৃহস্পতিবার তারউপর ব্যক্তিগত একটা কারণে আপসেট ছিলাম। মন ডাইভার্ট করতে তাই গতরাতে ওয়েবসিরিজ কাইজার দেখলাম। ইনফ্যাক্ট এটাই প্রথম বাংলাদেশী ওয়েব সিরিজ দেখা আমার। একটানাই দেখা যেতো কিন্তু মাঝে টিভি দেখতে গিয়ে বিরতি নিয়ে আবার শুরু করছি। 

আমি রহস্য বা ভূতের কিছু দেখিনা। সবসময় হাসি, ফান, আনন্দের সিনেমা, নাটক দেখাই আমার অভ্যাস।

তবে কাইজার আমি একবারেই শেষ করলাম। অসাধারণ ক্যামেরার কাজ। কালার ও সাউন্ড ইফেক্ট দারুণ। আজাইরা গান টান নাই। কাহিনী খুব যে অপরিচিত বা আহামরি কিছু তা না কিন্তু অভিনয় ও মেইকিং দিয়ে দর্শকদের টেনে নিয়ে যায়। মুগ্ধ করে দেয়। হালকা পাতলা কিছু সমস্যা আছে বাট সেগুলা চোখে পড়লেও আটকে যায়নাই আমার। 

কাইজার চরিত্রে আফরান নিশো জাস্ট অনবদ্য। নিশোর কোন নাটকও আমি দেখিনাই আগে কারণ আমি শমি, বিপাশা, মিমি আমলের দর্শক। বাট এই একটা চরিত্রের মাঝে পাগলাটে, নেশার দুনিয়া থেকে উঠে আসা, অসম্ভব কষ্ট বুকে চেপে বেঁচে থাকা, ক্যারিয়ারে মেধা থাকা সত্ত্বেও তেমন চৌকষ কিছু করতে না পারা একজন মানুষের ক্যারেক্টারাইজেশন এক কথায় বাংলাদেশের খুব কম অভিনয় শিল্পীর আছে বিশেষ করে এ যুগের অভিনয় শিল্পী মানে নিশো টাইপ শিল্পীদের মাঝে আছে বলে আমার আস্থা ছিলো না (হতে পারে আমার দুর্বলতা)। কিন্তু নিশো অসাধারণ কাজ করেছে। তার ভয়েসও চেইঞ্জ করছে মনে হইলো। চরিত্রের সাথে মিলিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলা নিশোর কাছে প্রত্যাশিত ছিলোনা কিন্তু এই কাজটা সে অসামান্য যোগ্যতায় করেছে। 

প্রতিটি চরিত্রেই সবাই দারুণ কাজ করেছে। শতাব্দী ওয়াদুদ আমার কাছে সবসময় একজন শক্তিশালী অভিনেতা। কিন্তু তার যোগ্যতা অনুযায়ী কাজটা সে এখনও পায়নি বা পরিচালকরা তাকে ব্যবহার করতে পারেনি বলে আমার মনে হয়। অনেক নতুন মুখ আছে এই সিনেমায়। খুব ছোট একটা চরিত্রে অভিনয় করেছে আমাদের ছোট বোন সানজানা মেহরিন। ভালো করেছে কিন্তু এই চরিত্রের আরও কিছু ফুটেজ থাকতে পারতো। ঐ যে বললাম কিছু জায়গায় ল্যাপস আছে। সাক্ষীর জায়গাটা একদমই টাচ করেনি পরিচালক। কাজের বুয়ার চরিত্রটিকে আরেকটু ইউটিলাইজ করা যেতো যদি সাক্ষীর বিষয়টা সামনে আনতো। যাইহোক, ফোকাস হয়তো ভিন্ন তাই। 

এক কথায় দারুণ কাজ। সব মিলিয়ে "কাইজার" দর্শক টেনে রাখার সামর্থ্য রাখে। এই সিরিজের সবার জন্য শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইলো। কাহিনীর টুইস্ট একদম শেষ পর্যন্ত বজায় রেখেছে। রহস্যকে ঘিরেই হেঁটেছে দর্শকরা। 

তবে এই সিনেমার মাধ্যমে কিন্তু একটা শক্ত মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করছে পরিচালক। অনেকেই হয়তো সেইটা খেয়াল করেনাই বা করছে বা খেয়াল করলেও সামনে আনেনাই। তাছাড়া পরিচালকও খুব কৌশল অবলম্বন করছে বা প্লটের কারণেই মেসেজটা শেষেই দিছে। খুন হওয়া সাবা ও তার বান্ধবী জয়ার মধ্যে সমকামিতা ছিলো এইটা লাস্টের আগ পর্যন্ত বুঝা যায়নাই। সাবা বাই সেক্সুয়াল ছিলো। এই যে মানসিক টানাপোড়ন তার থেকে জয়ার আত্মহত্যা ও তার ফলশ্রুতিতে মাদক গ্রুপের হাতে সাবার খুনের কাহিনীকে ঘিরে রহস্য সিরিজ। জয়াকে কেউ হত্যা করেনি কিন্তু জয়ার সমকামিতাকে তার পরিবার মেনে নেয়নি। অন্যদিকে সাবার দ্বিধান্বিত অবস্থান, সবমিলিয়ে জয়াকে আসলে এই সমাজ, পরিবার খুন করেছে। 

পরিচালক তানিমের জন্য এক চিলতে বাড়তি ভালোবাসা এই মেসেজ থ্রো করার জন্য। আরও ভালো কাজ আসুক। আমাদের চলচ্চিত্র ও অভিনয় শিল্প বেঁচে থাকুক ভালো কাজের  মাঝে। আমরাও পারি। মেধা আমাদের কারও চেয়ে কম নেই।

হাঙ্গামা/লীনা পারভীন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url