Hawa : নিজের দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে 'হাওয়া' দেখতে ঢুকবেন

গত ২৯ জুলাই সারাদেশব্যপী মুক্তি পেয়েছে বহুল প্রতিক্ষিত চলচ্চিত্র 'হাওয়া'। আলোচিত নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের পরিচালনায় এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি, নাসির উদ্দীন খানসহ আরো অনেকেই। আলোচিত এই সিনেমাটি দেখে নিজস্ব মতামত জানিয়েছেন ওয়াসিফ চৌধুরী নামের একজন দর্শক। তার লেখা আলোচনা মূলক নিবন্ধটি হাঙ্গামা২৪ এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
Hawa : নিজের দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে 'হাওয়া' দেখতে ঢুকবেন
নিজের দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে 'হাওয়া' দেখতে ঢুকবেন

কোনো রিভিউ নয়; হল থেকে বেরিয়েই নিজের স্পয়লারমুক্ত অভিমত প্রকাশ করছি মাত্র || ওয়াসিফ চৌধুরী 


খুব বেশি নয়। হয়তো মাস দুয়েক আগে প্রথম জানতে পারি "হাওয়া" সিনেমার কথা। শ্রেষ্টাংশে চঞ্চল চৌধুরী আছেন- কোনো সিনেমায় এর চেয়ে লোভনীয় অফার আর কি-ই বা হতে পারে! তাই যেদিন প্রথম "সাদা-সাদা কালা-কালা" গান রিলিজ হয়, সেদিন ঠিক টের পাইনি "হাওয়া" টিম যে শুধুমাত্র এই গান দিয়েই পুরো বাংলাদেশকে জানান দিয়ে দিলো- এক নতুন দখিনা বাতাস আসছে; আসছে এক পালাবদলের হাওয়া!!

মুক্তি পাবার আগেই যে সিনেমার গান মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ ছাড়িয়ে যায়, শহর থেকে গ্রাম, সুউচ্চ দালানের অফিসরুম থেকে চায়ের টং দোকান পর্যন্ত যে গান হাওয়ার বেগে ছুটে বেড়ায়, সেই সিনেমা নিয়ে হাইপ যে হবে আকাশচুম্বী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! হতাশ করেনি "হাওয়া", হতাশ করেননি মেজবাউর রহমান সুমন। 

কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে এতদিন "সাদা-সাদা কালা-কালা" গানটা শুনে একটা কথাই ভাবতাম, "মিউজিক ভিডিওতে সেট ডিজাইন, থিম, আর এক্টিং যেমনটা ন্যাচারাল লাগছে, সিনেমা "হাওয়া" কি আসলেই তেমনটা উপহার দিতে পারবে?" এই "সন্দেহ পোষণ করা"-টা ছিল আমার জীবনের ওয়ান অফ দ্যা বিগেস্ট মিস্টেক!

"হাওয়া" আপনার জন্য এমন কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে যা দেখে এই বিরাট চাওয়া-পাওয়ার হিসেবকেও অনেক ছোট্ট মনে হবে!

সিনেমার খুটিনাটি এত্ত বুঝি না; বাংলা সিনেমা এতোটা দেখাও হয় না। কিন্তু "হাওয়া" দেখার সময়ে এই ২ ঘন্টা মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরছিলো, "একটা স্টুডিওর ভেতর এমন ন্যাচারাল লাইটিং, শুটিং, আর এক্টিং কেমনে সম্ভব!" বোধ করি, পরিচালক সুমন সাহেবকে কখনো সামনে পেলে এই একটা প্রশ্নই করতাম, "ভাইরে ভাই! সিনেমার কোন কোন দৃশ্য আসলেই মাঝ সমুদ্রে নেয়া, আর কোনগুলা স্টুডিওতে, প্লিজ বলেন! এত্ত নিখুত এডিটিং, শুধু এই ডিফরেন্সটা ধরতে না পারায় নিজেরে বলদ মনে হৈতেছে!" 

এই সিনেমার সাথে জড়িত প্রত্যেক শিল্পী, হোক পর্দার সামনে কিংবা পেছনে, তাদের সর্বোচ্চ থেকেও বেশি কিছু উপহার দিয়েছেন। শ্রেষ্ঠাংশে থাকা সবচেয়ে বড় চমক ছিলেন শরিফুল রাজ। "পরিমণির জামাই" বলে এই বান্দাকে নিয়ে যদি কখনো মজা নিয়ে থাকেন, তাইলে হাওয়া দেখতে সিনেমা হলে ঢোকার সময় নিজের দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে ঢুকবেন। হ্যাঁ, এই তো গেলো মাত্র একজন শিল্পীর ডেডিকেশন, কিন্তু বাকিরা? 

"হাওয়া" সিনেমার কোন একটি দিক যদি হাইলাইট করতে বলেন, তবে প্রথমটি হবে এক্টিং, দ্বিতীয় হবে এক্টিং, আর তৃতীয়তেও এক্টিং। চার নাম্বারে নিয়ে আসবো ফিল্ম মেকিং, কিন্তু সেটা আবার বিরাট হুলোস্থুল ব্যাপার! এত কাঠখড় পুড়িয়ে বাংলাদেশে আগে কোনো সিনেমা বানানো হয়েছে কি না আমার জানা নেই। একটু বাড়িয়ে বলছি মনে হচ্ছে? সিনেমা হলে যেয়ে কথার প্রমাণ স্বচক্ষে দেখে আসতে পারেন।

ফিল্ম আসলে নেশার মতো... একবার এই নেশায় পড়ে গেলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসাটা অনেক কঠিন! ঠিক যেমনটা "হাওয়া" সিনেমায় চাঁন মাঝির জন্য কঠিন ছিল জালে মাছ না ধরে তীরে ফিরে আসা, কিংবা এক নৌকোভর্তি পিপাসু চোখকে ফাঁকি দিয়ে গুলতির টিকে থাকা...

ক্যামেরার পিছনে যখন মেজবাউর রহমান সুমন সাসপেন্স আর হিউমারের এক অসাধারণ কম্বিনেশন মেলাতে ব্যস্ত, ক্যামেরার এপাশ থেকে তখন অভিনয়শিল্পীরা আপনাকে নিয়ে যাবেন নীল দরিয়ায় রহস্যমাখা প্রেমের এমন কোনো এক মরীচিকায়, যেখানে আপনি আগে কখনও যান নি। কখনো কল্পনাও করেননি বাংলা সিনেমার হাত ধরে সেখানে যাবেন। হ্যাঁ, এই সেই হাওয়া! এর জন্যি এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম আমি, আপনি, আর পুরো একটি বাংলাদেশ!  

শুনেছি এই সিনেমা প্রায় ৩ বছর প্রডাকশনে ছিল। তিন কেনো? এমন "হাওয়া"-র অপেক্ষা তিরিশ বছরও করা যায়!

হাঙ্গামা/ওয়াসিফ চৌধুরী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url