Hawa : নতুন হাওয়া বইয়ে দিবে 'হাওয়া'

ঢাকাই সিনেমার সোনালী দিন অতীত। মাঝে ভালো গল্প ও নির্মাণ একদম দেখা যায়নি বললেই চলে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া কিছু সিনেমা যেন নতুন কিছুর ডাক দিচ্ছে। এভাবে চলমান থাকলে বাংলাদেশের বিশ্ববাজারে স্থান পেতে বেশিদিন লাগবে না। পাশাপাশি বদলাবে দর্শকদের রুচিও। এমন প্রসঙ্গকে উপজীব্য করেই এই আলোচনা নিবন্ধটি লিখেছেন বোরহান উদ্দিন। তার লেখা এই নিবন্ধটি হাঙ্গামা২৪-এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
নতুন হাওয়া বইয়ে দিবে 'হাওয়া'
নতুন হাওয়া বইয়ে দিবে 'হাওয়া'

নতুন হাওয়া বইয়ে দিবে 'হাওয়া' || বোরহান উদ্দিন 


কয়েকদিন আগে 'আসা যাওয়ার পথে' দেখলাম। নামের প্রতি পুরোপুরি সুবিচার করলো যেন সিনেমাটা। দু'জন মানুষ। তারা স্বামী-স্ত্রী। চাকুরী করেন। পুরো সিনেমায় কোনো সংলাপ নেই। শুধুই আসা যাওয়ার পথে দেখা হয় দু'জনের। অথচ চুম্বকের মতো টেনে রাখছে স্ক্রিনে সিনেমাটা।

এমন শিল্প কপচানো সিনেমা আমাদের দেশে রিলিজ পেলে নিশ্চিত হাসাহাসি করতো কিছু দর্শক। অনেকেই আবার নাটক/টেলিফিল্ম তকমা দিত! যেখানে অজ্ঞাতনামা অথবা কমলা রকেটের মত শৈল্পিক সিনেমাকে নাটক বলে বেড়ায় আমাদের দেশের এক শ্রেণীর দর্শক। এটা কি ইচ্ছাকৃত নাকি অজ্ঞতার পরিচয় বোঝা বড় মুশকিল। সিনেমা আগাগোড়া একটা আর্ট। যেখানে আর্টিস্টরা (সকল কলাকুশলী) মনের মাধুরী মিশিয়ে আর্টের খেলায় মেতে উঠবেন। হোক সেটা বাণিজ্যিক সিনেমা, হোক সেটা শিল্প কপচানো সিনেমা। আর্ট হতে ছিটকে পড়লে তা সিনেমা হতে পারে না।

মানের দিক থেকে ভালো সিনেমার সংজ্ঞা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে খুব রসিক হয়ে যায়। এখানে বেশিরভাগ চলচ্চিত্র দর্শক শুধু বিনোদনের জন্য ছুটির দিনে সিনেমা দেখেন। খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করার টাইম তাদের নেই। তবে ভালো মানের সিনেমাগুলোর দর্শক নেই তা নয়। বরং সুন্দর পরিবেশ না থাকার কারণে অনেক প্রেক্ষাগৃহে দর্শক যান না। 

আমি ঢাকার গল্প জানি না, তবে চট্টগ্রামের উদাহরণ টানতে পারি। চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে পরাণ দেখলাম। অনেক খুঁজেও সেসব দর্শকদের পেলাম না যারা সিনেমা প্যালেস, সুগন্ধা বা আলমাসে নিয়মিত বাণিজ্যিক সিনেমা দেখেন। আবার সিলভার স্ক্রিনের সেসব দর্শকদের আলমাস বা সিনেমা প্যালেসে শাকিব খান, বাপ্পি, জায়েদ খানদের সিনেমা দেখতে যেতে দেখি না। এসব ছোট্ট বিষয় অনেকে না বুঝেই বুলি আওড়ান। পাপ পূণ্য বা মৃধা বনাম মৃধা কি খারাপ সিনেমা? বরং আমাদের দেশে এমন সিনেমার দর্শক কম। অথবা পরিবেশ নেই। তবে সুদিন ফিরছে, ভালো গল্পের দর্শক বাড়ছে।

যাইহোক, ২৯ জুলাই থিয়েটারে রিলিজ হতে যাচ্ছে বর্তমানে আলোচনার তুঙ্গে থাকা 'হাওয়া' সিনেমাটি। ইতোমধ্যে এই সিনেমার গানগুলি তুমুল আলোচনার পাশাপাশি জনপ্রিয়তাও পায়। সবাই প্রশংসা করছেন অসাধারণ গান দুটির। তাছাড়া পোস্টার ও ট্রেলার দিয়ে আগেই বাজিমাত করে হাওয়া। 

গুণী নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের এই সিনেমায় সময়ের আলোচিত অনেক তারকারা অভিনয় করেছেন। চঞ্চল চৌধুরীর মতো বাঘা অভিনেতার পাশাপাশি আরও রয়েছেন সময়ের আলোচিত শরিফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খান, সোহেল মন্ডল, নাজিফা তুষিসহ অনেকে। এমন দুর্দান্ত কাস্টিং দেখে যে কেউ আশাবাদী হবেন। সর্বোপরি টিভিতে ভিন্নধর্মী কাজ করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন নামটিই বড় চমক।

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বহুদিন পর দারুণ সময় পার করছে। শান, গলুই সিনেমার পর পরাণ সিনেমায় মজেছেন সবাই। পরাণের রেশ কাটার আগেই আরও একটি জমজমাট সিনেমা পেতে চলেছেন চলচ্চিত্র প্রেমীরা। আমি নিশ্চিত 'হাওয়া' সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন এক হাওয়া বইয়ে দিবে। এভাবে একের পর এক ভালো সিনেমা তৈরির পাশাপাশি তেমন দর্শকও বৃদ্ধি পাক। ভালো সিনেমা ছাড়া, শৈল্পিক ধারার সিনেমা ছাড়া চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি কখনোই সমৃদ্ধ হয় না।  'হাওয়া' টিমের জন্য শুভ কামনা।

হাঙ্গামা/বোরহান উদ্দিন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url