Rahul Banerjee : ফাঁসির মঞ্চ থেকে এসে ভুগছেন রাহুল!

Rahul Banerjee - রাহুল ব্যানার্জী
Rahul Banerjee - রাহুল ব্যানার্জী

ফাঁসির মঞ্চ থেকে এসে ভুগছেন রাহুল!


টালিউডের আর্ট সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তার অভিনয় যেন মানুষের বাস্তব জীবনেও দাগ কেটে থাকে। এই অভিনেতা সম্প্রতি জড়িয়েছিলেন ধর্ষনের মতো বিচ্ছিরি ঘটনায়। আর তাই তাকে হতে হয়েছে আদালতের সম্মুখিন। দীর্ঘসময় যাচাই বাছাই শেষে বিচারক তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন।

এমন জঘন্য অপরাধে তার ফাঁসি হোক, এমনটাই কাম্য ছিলো দেশবাসির। ফাঁসির দিনক্ষণও ঠিক হয়ে যায়। এরপর তাকে নেয়া অন্ধকার একটি বদ্ধ কনডেম সেলে। টানা পনেরো দিন ভোগ করেছেন মৃত্যুযন্ত্রণা। মৃত্যুভয়ের সঙ্গে সহবাসে কেটেছে প্রতিটা মুহূর্ত। এমনই রুদ্ধশ্বাস গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মৃত্যুপথযাত্রী’ নামের সিনেমাটি।

সৌম্য সেনগুপ্ত'র পরিচালনায় নির্মিত ‘মৃত্যুপথযাত্রী’ সিনেমার প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সিনেমার কাজ করতে গিয়ে মারাত্মক অবসাদেও ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। শুটিং শেষ করেই যেতে হয়েছিলো মানসিক চিকিৎসকের কাছে। এবার সেসব প্রসঙ্গ নিয়েই মুখোমুখি হরেন সংবাদমাধ্যমের। রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একান্ত আলাপটি হাঙ্গামা২৪-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

  • সংবাদমাধ্যম: সিনেমায় আপনি ছিলেন ফাঁসির আসামি। মৃত্যুর আগের ১২ ঘণ্টার সাক্ষী। এমন চরিত্রে কাজ করতে হবে শুনে আপনার কেমন লেগেছিল?
রাহুল: ‘মৃত্যুপথযাত্রী’র গল্প শুনে প্রথমে একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম। তার পরে প্রচণ্ড উত্তেজনা অনুভব করি। একটা ছবির পুরোটা জুড়ে শুধু আমিই! এটা তো খুব কম অভিনেতার ভাগ্যে জোটে। আমার কাছে খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। বলতে পারেন কঠিন পরীক্ষা দিয়ে উঠলাম।

  • সংবাদমাধ্যম: ফাঁসির আসামির শেষ ১২ ঘণ্টা নিয়ে কোনও দিন কৌতূহল জেগেছিল?
রাহুল: আমি তখন অনেকটা ছোট। সেসময় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের (পূর্বের একজন ফাঁসির আসামি) মৃত্যু প্রায় পণ্য হয়ে উঠেছিল। আজ ধনঞ্জয় পোস্তর বড়া দিয়ে ভাত খেলেন। কাল ধনঞ্জয় কিশোর কুমারের গান গাইলেন। আমরা চাই বা না চাই সংবাদমাধ্যম কৌতূহল তৈরি করে দিয়েছিল। সেই সময়ে আমার মনেও আগ্রহ জন্মেছিল। রোজ ধনঞ্জয়ের খবর পত্রিকায় পড়ছি। আর ভাবছি, আসামির মনের কী অবস্থা? নিত্যদিনকার জীবনে কোনো ফাঁসির আসামিকে নিয়ে এর বাইরে তো আমরা আলাদা করে ভাবি না।

  • সংবাদমাধ্যম: ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগের প্রস্তুতি কেমন ছিল?
রাহুল: প্রস্তুতির সময়টায় আমি যেন করোনাকালে ফিরে গিয়েছিলাম। টানা ১৫ দিন বাড়ির কারও সঙ্গে কথা বলিনি। কারণ, ফাঁসির আসামিরা মৃত্যুর আগে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পায় না। একদম একা থাকে। সারা ক্ষণ দরজা বন্ধ করে থাকতাম। বন্ধ দরজার বাইরে খাবার রাখা হত। দু’মাস চুল, দাড়ি-গোঁফ কিচ্ছু কাটিনি। প্রচুর পড়াশোনা করেছি। পরিচালক সৌম্য সেনগুপ্ত অনেক তথ্য জোগাড় করে দিয়েছিলেন। আর কিছু সংশোধনাগারে যোগাযোগ করেও কথা বলেছি।

  • সংবাদমাধ্যম: অভিনয় করতে করতে টের পেলেন, শেষের আগের ১২ ঘণ্টা কতটা ভয়াবহ?
রাহুল: অবসাদে ডুবে গিয়েছিলাম। পুরো ছবির শ্যুট শেষে মনোবিদের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। সারাদিন মৃত্যুর সঙ্গে সহবাস। প্রতি দিন একই বিষয় নিয়ে শ্যুট। আমায় সেই অনুভূতি বহন করতে হয়েছে। বাড়ি ফিরে যে হালকা ধরনের কোনও ছবি দেখে নেব, সেই উপায়ও ছিল না। মারাত্মক চাপ পড়েছিল মনের উপরে।

  • সংবাদমাধ্যম: একুশ শতকে ফাঁসি যুক্তিযুক্ত?
রাহুল: মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আমার মতামত অনেকটা শাঁখের করাতের মতো। জানি না কোন দিকে যাব। এক দিকে মনে হয় সভ্য দেশে এই শাস্তি থাকা উচিত নয়। পর ক্ষণেই মনে হয়, যে দেশে এত ধর্ষণ হয়, সে দেশ কি আদৌ সভ্য? একটা করে ধর্ষণের ঘটনা সামনে এলেই মনে হয় এদের আর বাঁচিয়ে রেখে কোনও লাভ নেই। তা ছাড়া, এই ছবিতে কে, কতটা অপরাধ করেছে বা মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত কি না, তার বিশ্লেষণ দেখানো হয়নি। সিদ্ধান্ত দর্শক নেবেন।

  • সংবাদমাধ্যম: পর্দায় দর্শক আপনার শেষ ১২ ঘণ্টায় কী কী করতে দেখবেন?
রাহুল: সমস্ত অনুভূতি নিংড়ে দিতে দেখবেন। ফাঁসির আসামির মতোই কখনও হেসেছি। কখনও রেগেছি। কখনও হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছি। আবার সেই আমিই অনুতপ্ত। বারংবার ‘সরি’ বলেছি। আর সারা ক্ষণ মৃত্যুভয়ে কেঁপেছি।

  • সংবাদমাধ্যম: চরিত্রের মাধ্যমে জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কী বুঝলেন?
রাহুল: মৃত্যু শাশ্বত। একে রোখার সাধ্য কারও নেই। জন্মালে মরতে হবেই। যে ভাবেই হোক। আর জীবন একটা যাত্রা। কোনও কিছু অর্জন এর প্রধান লক্ষ্য নয়। বরং না থেমে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।

  • সংবাদমাধ্যম: তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে পরপর চার মডেল-অভিনেত্রীর আত্মহননকে কী বলবেন?
রাহুল: অসময়ে মৃত্যু কখনওই কাম্য নয়। তার উপরে পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগী এবং সরস্বতী দাস বয়সেও খুবই ছোট। ফলে, প্রত্যেকটা মৃত্যুসংবাদ আঘাত করেছে। এই ঘটনা ঘটা উচিত ছিল না।

হাঙ্গামা/প্রিয়াঙ্কা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url