পর্ন দেখবেন? নাকি দেখবেন না?
পর্ন দেখবেন? নাকি দেখবেন না? |
পর্ন দেখবেন? নাকি দেখবেন না?
- শিমুল চৌধুরী ধ্রুব
পৃথিবীতে সিনেমার মতো বিশাল একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে যা পর্ন ইন্ডাস্ট্রি বা নীল ছবির দুনিয়া নামে পরিচিত। এই ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাগুলোর উপকারিতা এবং অপকারিতার বিচার করলে অপকারিতার পাল্লাই ভারী হয়। যদি নাম্বার দিতে হয়, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এর উপকারিতায় শতাংশ অনুযায়ী নাম্বার দেবো মাত্র ২০। আর বাকি ৮০ ভাগই মানব জীবনের বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে এই নীল ছবি ভয়ঙ্কর সামাজিক ক্ষতিসহ অর্থনৈতিক, মানসিক এবং শারিরিকসহ বিভিন্ন ক্ষতির কারণ। যা অনেকে কিছুটা জেনেও সচেতন না হয়ে বরং আসক্ত অবস্থাতেই পড়ে থাকেন নীল সিনেমার কালো দুনিয়ায়। আবার বেশিরভাগ দর্শকই না জেনে ধীরে ধীরে আসক্ত হন। তারা অনেকেই জানেন না নিজেরাই নিজেদের কতবড় শত্রু হয়ে যাচ্ছেন। ক্ষতি করছেন নিজের, পরিবারের এবং সমাজের। তাদের উদ্দেশ্যে নীল ছবির ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
নীল ছবি সংক্রান্ত ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য:
১) পর্ন কিংবা নীল ছবি নিছকই একটি সিনেমা। সেখানে যা হচ্ছে, তা পুরোপুরি অভিনয়। সেখানে বাস্তবতার অনেক ফারাক রয়েছে। মাত্র ১০ মিনিটের একটা ভিডিও বানাতে ১০ দিনেরও বেশি সময় শ্যুটিং করা হয়। তারপর তা সাধারণ সিনেমা নাটকের মতোই সম্পাদনা (ইডিট) করা হয়। সেখানে সবকিছুই ফেইক। এমনকি এক্সপ্রেশনটাও ফেইক।
২) এসব ভিডিওতে অভিনয় করা শিল্পীদের শরীরের বেশিরভাগ অংশই কৃত্রিমভাবে তৈরি। যা একদমই স্বাভাবিক নয়। তাদের শরীরের বিশেষ অঙ্গগুলো সার্জারি করে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর মেডিসিনের মাধ্যমে আকার আকৃতি পরিবর্তন করা হয়।
নীল ভিডিওর একজন নারীর কথাই ধরা যাক। তাদের স্বাভাবিক শরীরকে কেটে ছেটে বারবি ডলের আকৃতি দেয়া হয়। বিশেষ করে বুক এবং পেছনের অংশ সার্জারি করে সিলিকন প্যাড ও বিভিন্ন ক্ষতিকর ড্রাগের মাধ্যমে ফোলানো হয়। তাদের দেখে যদিও অনেকের কাছে সুন্দর কিংবা মনমুগ্ধকর মনে হয়, কিন্তু ঐ নারীরা সবসময় ভোগেন মরণ রোগের ভয়ে। অপরদিকে বাস্তব জীবনের একজন নারীর কথাই ভাবুন। আমাদের এই উপমহাদেশের নারীরা ব্যক্তিগত জীবনে পড়াশুনা, চাকরি, সংসার, ছেলে-মেয়ের দেখা শোনা, ঘর-বাড়ির অনেক কঠিন কাজসহ কত দায়িত্ব পালন করে। তাদের এমন পরিস্থিতে সার্জারি করে শরীরের বিশেষ অঙ্গগুলি পরিবর্তন করা সম্ভব? মোটেও না। কারণ এমনসব সার্জারির পর থেকে আমৃত্যু থাকতে হয় বিশেষ ব্যবস্থা। জীবন-যাপনে থাকতে হয় নির্দিষ্ট নিয়ম। সেখানে উনিশ থেকে বিষ হলেই ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। তাছাড়া এর কারণে ক্যান্সারের প্রবল সম্ভাবনা থাকে।
৩) নীল দুনিয়ার মেয়েদের কি পরিমাণ অত্যাচার করা হয় জানেন? অনেকক্ষেত্রে তাদের মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করে অস্বাভাবিক মিলনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বাধ্য করা হয়। ভিডিওর প্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন ড্রাগ ইনজেক্ট করা হয়। তাদের জননপথ ও পায়ুপথে বিভিন্ন ড্রাগ ব্যবহার করা হয়। এমনকি কোকেইন ঢালা হয় যাতে অইসময়ে কোন অনুভূতি না হয়। বেশকিছু পোর্টালের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন ভয়ঙ্কর ড্রাগ ব্যবহার করার কারণে অনেক নারীর জরায়ু থেকে কিডনি কিডনি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারে মারা যায় তারা। তাদের নির্যাতন করে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় যে, তারা নিজ ইচ্ছায় এমন চরিত্রে কাজ করেছে। না হলেতো এই ইন্ডাস্ট্রি মুখ থুবরে পড়বে।
৪) একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তি নীল ভিডিওর নারীর সার্জিকাল কৃত্তিম শরীরের মতোই আশা করে তার সঙ্গীর শরীর। কিন্তু তাতো আর বাস্তবে সম্ভব নয়। তখন আর সঙ্গীকে তার কাছে ভালো লাগে না। জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে। এমনকি বাড়িতে সঙ্গির কাছে না গিয়ে অনেকেই নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন পতিতালয়ে। এসব বিষয় নিয়ে ঘরেও শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। যা এক পর্যায়ে রুপ নেয় বিচ্ছেদে। তাছাড়া, কৃতিম শরীরের সাথে তুলনার ফলে সঙ্গীর মনও ভেঙ্গে যায়। ঠিক এমনটা ঘটে একজন পর্ন আসক্ত নারীরর জীবনেও।
৫) প্রতিনিয়ত চারিদিকে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটছে। যা বর্তমানে সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এমনকি এসব ধর্ষকামিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিশু কিংবা বৃদ্ধও। তা বিকারগ্রস্থতার শিকার হচ্ছে নিজের মেয়ে, বোন, চাচি, মামি, ফুপি এমনকি তাদের গর্ভধারিনি মাও। এমন অসংখ্য ধর্ষক পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে তারা নীল ভিডিও দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই ধর্ষন করেছে।
৬) প্রচলিত নেশাগ্রস্থতার ক্ষেত্রে যেমন সিগারেট থেকে শুরু হয়। যা এক পর্যায়ে হিরোয়েন, কোকেইন, ইয়াবা, ক্রিস্টাল আইসের মতো ভয়ানক মাদকে গিয়ে পৌছায়। তেমনি পর্ন আসক্তদের শুরুটা হয় স্বাভাবিত পর্ন ভিডিও দিয়ে। যা একটা পর্যায়ে আর তাকে খুশি করতে পারেনা। তখন আরো এক্সট্রিম ইনোভেটিভ ভিডিও দরকার হয়। তখন তারা রেইপ ভিডিও, শিশুকামী ভিডিও, গ্যাং ব্যাং, বিডিএসএম'র মতো ভিডিও গ্রহণ করা শুরু করে এবং নিজেকে একটু একটু করে মানুষ থেকে পশুতে রুপান্তর করতে থাকে।
৭) নীল ভিডিওতে আসক্ত ব্যক্তির কখনো সেল্ফ কনফিডেন্স থাকেনা। একজন ড্রাগ আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্ক এবং একজন পর্ন আসক্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এরা তাদের আসক্তিতে শুধুমাত্র ভিডিও দেখার জন্য ক্লাস, স্টাডি ট্যুর, ফ্যামিলি ট্রিপের মতো সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সেক্রিফাইস করতে পারে। এতে তাদের সাথে তৈরি হতে থাকে সামাজিক দূরত্ব। এক পর্যায়ে তারা হিনমণ্যতায় ভূগতে থাকে। যা অনেক ক্ষেত্রে আত্মহনণের মতো ঘটনার জন্ম দেয়।
৮) নীল ভিডিও ও হস্তমৈথুনের সম্পর্কটা একদম চা-বিস্কুটের মতো। একটা ছাড়া আরেকটা ঠিক জমে নাহ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই হস্তমৈথুনের জন্য নিজেকে উত্তেজিত করতে নীল ছবির দুনিয়ায় ঢু মারেন আসক্তরা। এরা ভিডিও দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করতে থাকেন। তখন তারা দ্রুত স্পার্ম আউট বা অরগাজম করে দ্রুতই সুখ নেয়ার চেষ্টা করেন। তাছাড়া বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশের কারণেও দ্রুততার সাথে হস্তকর্ম শেষ করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এটা তারা নিয়মিত করতে করতে তাদের মস্তিস্কে বিষয়টা সয়ংক্রিয় হয়ে যায়। তখন সঙ্গীর সাথে মিলনের সময়ও দ্রুততার সাথে স্থলন ঘটে। যাকে অকালস্থলন বলা হয়। এমনকি নিয়মিত হস্তমৈথুনের ফলে অনেকে পুরুষত্ব পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেন।
৯) অনেক আসক্ত ব্যক্তি মানসিক স্ট্রেসের ঠুনকো বাহানা দিয়ে মিথ্যে শান্তির জন্য ভ্রমণ করেন নীল ছবির দুনিয়ায়। এরা মন ভালো রাখার অযৌক্তিক অযুহাত দিয়ে নিয়মিত এসব ভিডিও দেখেন। এতে আসক্ত ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে খুশি হওয়ার ক্ষমতা চিরতরে হারিয়ে ফেলেন। শুধু তাই নয়, তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ তো পায়ই এমনকি বুদ্ধিমত্তাও কমে যায়। তাদের মেজাজ খিটখিটে থাকে সবসময়। সুন্দর কিছু চিন্তাও করতে পারে নাহ। ব্রেইন আর ভালো কাজে ব্যবহৃত হয় না। অকালে বুড়িয়ে যায় তারা।
১০) পৃথিবীতে যত বেশি এমন ভিডিও দেখা হবে তত বেশি মেয়েরা কিডন্যাপের শিকার হবে। কারণ আসক্তদের চাহিদা মেটাতে নতুন নতুন শরীরের প্রয়োজন। নিয়মিত এক মেয়ের ভিডিও দেখে তারা আর উত্তেজিত হচ্ছেন না। আর তাই প্রয়োজন নতুন নতুন নারী। নতুন নতুন শরীর। এই বিকৃতমনাদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য নারী।
১১) পর্ন ভিডিও তার দর্শকদের ধীরে ধীরে ধর্ষকে রুপান্তর করে। এমনকি তাদেরকে উৎসাহ দিতে আমাদের পরিচিত পরিবেশ, রুম, পেশা, পোশাক-আশাক ব্যবহার করা হয়। যাতে আসক্ত ধর্ষকেরা যেকোনো জায়গায় ভিডিওর দৃশ্য নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। যে ছেলেটা রাতে ছাত্র-শিক্ষিকা গল্পের নীল ভিডিও দেখে পরেরদিন স্কুলে যায়, সে তার স্কুলের ম্যাডামের দিকে আর স্বাভাবিক শ্রদ্ধাবোধের চোখে তাকাতে পারবে? তখন সেও তার শিক্ষিকাকে লালসার নজরেই দেখতে থাকে।
১২) অনেক আসক্তরা মনে করেন বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল। এই আসক্তি আপনার মননে যে ক্ষতি করে গেছে, তা থেকে সুস্থ হওয়া খুবই কঠিন। যারা নীল ভিডিওতে আসক্ত তাদের বিয়ের পরেও নিজেকে উত্তেজিত করতে পর্ন দেখতে হয়। কারণ তারা স্বাভাবিক শরীরে আকর্ষণ বোধ করেনা। ঐ সার্জারি করা কৃত্তিম শরীরেই তারা উত্তেজিত হয়। রক্ত মাংসের বউয়ের শরীর আর তাকে উত্তেজিত করে না। এদের অনেকেই বউকে এই বিকৃত ভিডিও দেখিয়ে বাধ্য করে পর্নের নারীর মতো মিলন করতে। এই আসক্ত ব্যক্তিরা তার সঙ্গির সুখের কথা চিন্তা করেনা। তাদের কাছে নিজেদের সুখটাই প্রাধাণ্য পায়। মেতে ওঠে ওরাল, এনালের মতো যন্ত্রনাদায়ক যৌনতায়। নিজের বিকৃত সুখের জন্য হয়ে ওঠে হিংস্র জানোয়ার। বিশ্বাস না হলে ইন্টারনেট ঘেটে নীল ছবি আসক্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার দেখতে পারেন।
সর্বপরি এই ইন্ডাস্ট্রি মানুষের স্বাভাবিক জীবনে প্রচন্ডভাবে ক্ষতিকর। যারা এতে আসক্ত হন তাদের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার, চাকরি জীবন, সংসার জীবন, ব্যক্তিগত জীবন সব ধ্বংস হয়ে যায়। এই জেনারেশনের সামনে মস্ত একটা পরীক্ষা। নীল ছবির দুনিয়াকি কেড়ে নেবে আমাদের স্বাভাবিক জীবন, নাকি আমরা এই ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যান করবো? যদি আমরা কেউ তাদের ভিডিও না দেখি, তাহলেই তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এই দুনিয়ার গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া কিশোর-তরুণ-যুবকেরা ফিরে পাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন। এখন সিদ্ধান্ত আপনার - নীল ছবি দেখবেন নাকি দেখবেন না?
হাঙ্গামা/ধ্রুব