Sohel Chowdhury : যে কারণে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে

যে কারণে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে
যে কারণে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে

যে কারণে খুন করা হয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে


নব্বই দশকে ঢাকাই সিনেমা দাপিয়ে বেরিয়েছেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। সেসময় তার মতো স্টাইলিস্ট হিরো বাংলা সিনেমায় তেমন একটা দেখা যায়নি। তার অভিনীত বেশিরভাগ সিনেমাই ছিলো ব্যবসাসফল। এই নায়কের ক্যারিয়ার যখন তুঙ্গে ঠিক তখনি ঢালিউডে নেমে এলো শোকের ছায়া। সন্ত্রাসীদের বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে মারা যান সোহেল চৌধুরী।

১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার অন্যতম আসামী ছিলেন আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী। এছাড়াও তৎকালীন আন্ডারওয়াল্ড ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আরো কয়েকজন ছিলেন আসামীর তালিকায়।

দীর্ঘ ২৪ বছর পর গত ২০ মার্চ সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ তিনজন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল ২-এর বিচারক জাকির হোসেন। এই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত বাকি দুই আসামি হচ্ছেন ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও সেলিম খান।

এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া তিনজনের কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না হলেও এই মামলার চার্জশিটভুক্ত অন্যতম প্রধান আসামী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী ধরা পড়েন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। গত ৫ এপ্রিল রাত পৌনে ১১টায় তার গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এই আসামিকে গ্রেফতারের পর থেকেই র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসতে থাকে খুন করার পেছনের চাঞ্চল্যকর তথ্য।

গত ৬ এপ্রিল (বুধবার) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব। এই সম্মেলনেই সোহেল বোতল চৌধুরীর কাছ থেকে পাওয়া সোহেল চৌধুরীকে হত্যার পেছনের কারণ প্রকাশ্যে আনেন র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, আশীষ চৌধুরীকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। তখন আশীষ সোহেল চৌধুরী হত্যার সাথে সম্পৃক্ততা স্বিকার করে। আশীষ জানিয়েছে, ১৯৯৬ সালে বনানীর আবেদীন টাওয়ারে আশীষ ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলামের যৌথ মালিকানায় ট্রাম্পস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত নানান অসামাজিক কার্যকলাপ হতো। একপর্যায়ে ক্লাবটি আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ও গ্যাং লিডারদের একটি বিশেষ আখড়ায় পরিণত হয়। সেখানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত ছিল আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের। তিনি মূলত ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের চক্রগুলোর সঙ্গে মিটিং করতে এই ক্লাবে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেই সুবাদে বান্টি ও আশীষের সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদের সখ্যতা তৈরি হয়। এই তিনজন ক্লাব ব্যবহার করে ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।

বনানীর আলোচিত ঐ ট্রাম্পস ক্লাবে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীও নিয়মিত যেতেন। এই ক্লাবে বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমসহ উচ্চ শব্দে গান-বাজনা হতো। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন সোহেল। এ নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গেও তার বাগবিতণ্ডা হয়। এতে অপমানিত হন আজিজ। প্রকাশ্যে তাকে অপমান করায় সোহেল চৌধুরীকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করেন ওই ক্লাবের স্বত্বাধিকারী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী ও আসাদুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম। তাদের যৌথ পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় সোহেল চৌধুরীকে। তবে এই হত্যার দায়িত্ব নেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। তিনি তখনকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে দায়িত্ব দেন। ইমনসহ তার গ্যাং ১৯৯৮ সালের ২৪ জুলাই বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে গুলি করে হত্যা করে নায়ক সোহেল চৌধুরীকে। 

র‌্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে গত ৬ এপ্রিল রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১০ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গুলশান থেকে চার্জশিটভুক্ত পলাতক আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরীকে (৬৩) গ্রেফতার করি। এ মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন তারিক সাঈদ মামুন ও হারুন অর রশীদ। তবে আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সানজিদুল হাসান ইমন ও সেলিম খান এখনো পলাতক রয়েছেন।

উল্লেখ্য, সোহেল চৌধুরী ভাালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সেসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভীন সুলতানা দিতিকে। তাদের সেই সুখের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। তারা হচ্ছেন ছেলে সাফায়েত চৌধুরী ও মেয়ে লামিয়া চৌধুরী। এর মধ্যে সাফায়েত থিতু হয়েছেন কানাডায়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নেদাল্যান্ডসের এক তরুণীকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে আমস্টারডামে বসবাস করছেন তিনি। আর মেয়ে লামিয়া চৌধুরী কানাডায় লেখাপড়া শেষে ঢাকাতেই স্থায়ী হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ফাস্টফুড ডেলিভারির ব্যবসা করছেন।

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url