Pori Moni : ‘‘আদালতে কথা বলতে না পারলে কোথায় বলব?’’
Pori Moni - পরীমনি |
‘‘আদালতে কথা বলতে না পারলে কোথায় বলব?’’
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনি। গত বছরের ৮ই জুন ঢাকার সাভারস্ত বোট ক্লাবে ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন তিনি। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে কয়েকজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তাদের বিচার দাবি করেন এই নায়িকা। সাভার থানায় একটি মামলাও দায়ের করেন তিনি।
সেই ধর্ষণচেষ্টা, মারধর ও শ্লীলতাহানির মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হলো ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) সকালে। পরীমনির উপস্থিতিতেই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এ এই শুনানি শেষ হয়। শুনানি অনুযায়ী ঢাকা বোট ক্লাবকান্ডে পরীমনির করা মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ তিনজনের বিচার শুরু হবে কি না তা জানা যাবে আগমী মে মাসের ১৮ তারিখ।
চিত্রনায়িকা পরীমনি বর্তমানে অন্তঃস্বত্তা। এ অবস্থাতেও আদালতে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেসময় শুনানি চলাকালে বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন এই নায়িকা। তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে আদালতকে বলেন, ‘‘এখানে কথা বলতে না পারলে কোথায় বলব?’’ এছাড়া আদালতের কাছে ন্যায়বিচারও দাবি করেছেন পরী। তিনি ছাড়াও শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনসহ জামিনে থাকা তিন আসামি।
আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে পরীমনি আদালতকে বলেন, ‘‘নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ তিনজনেরই অনেক পাওয়ার (ক্ষমতা)। ঢাকার বোট ক্লাবে কাউকে রেপ (ধর্ষণ) করার জন্য তাদের কোনো রুমের প্রয়োজন হয় না। তাদের এক ফোনকলে সেখানের আলো নিভে যায়। তারা খেলার মাঠের মতো ফাকা স্থানেও যে কোনো মেয়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাকে রাত ১২টায় তারা ফোর্স করে (জোরপূর্বক) বোট ক্লাবে ডেকে নিয়ে যান। আমি পরনে শর্টপ্যান্ট ছিলো। শর্টপ্যান্ট পরে সেখানে ঢোকার কোনো নিয়ম নেই। তাদের ক্ষমতার জোরে আমাকে তারা সেখানে প্রবেশ করান।’’ এভাবে প্রায় ঘণ্টাখানেক শুনানি চলার পর উপস্থিত আইনজীবীরা তাকে থামতে বলেন। এ সময় পরীমনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং বলেন, ‘‘আমি এখানে কথা বলতে না পারলে কোথায় বলব?’’
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘‘২০২১ সালের ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে পরীমনির বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দুটি গাড়িতে করে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন তারা। বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে দুই মিনিটের কাজের কথা বলে অমি সবাইকে রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবে নিয়ে যায়। কিন্তু এতোক্ষনে বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বললে সাথে সাথে গার্ডরা ক্লাবের গেট খুলে দেয়।’’
এজাহারে আরো বলা হয়, অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা আসতে পারো। তখন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে এবং বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর আসামী নাসির উদ্দিন মাহমুদ সবাইকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করে এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে পরীমনি, জিমি ও বনি রাজি না হয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমি ও নাসির উদ্দিন মদপানের জন্য জোর করেন। পরীমনি মদপান করতে না চাওয়ায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জোর করে মুখের ভেতর মদের বোতল ঢুকিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে। এতে সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাতপ্রাপ্ত হন চিত্রনায়িকা পরীমনি।
প্রসঙ্গত, বোটক্লাব কান্ডে পরীমনি মামলা দায়ের করার পর তুহিন সিদ্দিকী অমির উত্তরার বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ পাঁচ জনকে। অমির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়। এরপর ১৪ জুন রাত ১২টা ৫ মিনিটে ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় নাসির, অমিসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। ডিবির করা মামলায় কয়েক দফা রিমান্ডে নেয়া হয় নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিকে। এরপর তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পায় এই আসামীরা।
এদিকে, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলার তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে। গত বছেরের ৭ সেপ্টেম্বর তিন জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন আাদলতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আসামীরা হলেন— নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি ও শাহ শহিদুল আলম। বর্তমানে তিন জনই জামিনে রয়েছেন।
হাঙ্গামা/সানজানা