পরীর বশে রূপ আর রূপের বশে গুণিন

পরীর বশে রূপ আর রূপের বশে গুণিন
পরীর বশে রূপ আর রূপের বশে গুণিন

পরীর বশে রূপ আর রূপের বশে গুণিন


গত ১১ মার্চ মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত সিনেমা ‘গুণিন’। এই সিনেমাটি প্রযোজনা করেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’। এটি কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছোটগল্প ‘গুণিন’ অবলম্বনেই নির্মাণ করা হয়েছে। এই সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আজাদ আবুল কালাম এবং মুখ্য ২ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরিফুল রাজ ও পরীমনি। এছাড়া আরো অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, ইরেশ যাকের, মোস্তফা মনওয়ার, শিল্পী সরকার অপু ও ঝুনা চৌধুরীসহ আরো অনেকেই।

গ্রাম্য পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও ত্রিভুজ প্রেমের গল্পের এই সিনেমা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা করেছেন জুনায়েদ শাহরিয়ার প্রান্ত। ‘বাংলা চলচ্চিত্র’ নামের জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ থেকে সংগ্রহ করে তার এই আলোচনাটি হাঙ্গামা২৪-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

পরীর বশে রূপ আর রূপের বশে গুণিন ।। জুনায়েদ শাহরিয়ার প্রান্ত


গুণিনরা, জ্বীন-পরী বশ করে। সেটাতো শুনেছি। পরীর রূপ আবার গুণিনকে বশ করে কিভাবে? উত্তরটা সহজ। চরকি অ্যাপটা খুললেই বুঝতে পারবেন, ভুল বলিনি। আপনাকেও বশ করে ফেলবে পরী, শুধুমাত্র তার রূপ দিয়ে। যে রূপ আঁকড়ে রেখেছে শুধুই গুণিনের নাতিদ্বয়কে নয়, পুরো গুণিন সিনেমাটাকেই!

মায়াকাড়া চোখ, থমথমে মুখে রাজ্যের অপূর্বতা নিয়ে মন পুড়িয়ে দিয়েছিলো যে ‘পরী’ মনপুরায়! মনে পড়ে সেই ফারহানা মিলিকে? স্বপ্নজালের আরেক পরীর কথা মনে আছে? আহা! কতটা শুভ্রতা ছিলো সেই শুভ্রা চরিত্রের মেয়েটার মাঝে। ডানাকাটা পরীর ডানাতে কেউ যেন লেপ্টে দিয়েছিলো কিছু ভিন্ন রঙ। আর দুই পরীতে মুগ্ধ করা সেই কেউ’টা ‘মনপুরা’ আর ‘স্বপ্নজাল’ নামক এই দুই সিনেমার কারিগরই। 

নাম গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এবং মানুষটার সিগনেচার স্পেশালিটিস গুলোরই একটি, এই দুই সিনেমায় ফুটে উঠেছিলো যে, তিনি তার নায়িকাদের উপস্থিতিটা কতটা লাবণ্যতা মাখিয়ে করে থাকেন! তিনিই ৩য় সিনেমা বানালেন। নিলেন ২য় সিনেমার পরীকেই। আমরা বড়পর্দায় দেখলাম, ঐ চিরচেনা ফ্যাক্টরটাকেই একটু আরেক রূপে! 

মিরপুরের বিখ্যাত ‘সনি’ সিনেমাহল। সময়ের চাকায় চড়ে, দর্শকহীনতার জ্বরে ভুগে যেটা রূপ নিয়েছে নান্দনিক ‘সনি সিনেপ্লেক্সে’র। সেটিরই চারকোণা বড়পর্দার ফ্রেমে, গুণিন সিনেমার আপ-ডাউন দেখছিলাম। বৃষ্টি আর ঝিঁঝিঁ পোকার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, মোস্তফা মনোয়ার, রাজ, আবুল কালাম আজাদ, ইরেশ যাকেরদের অভিনয় যেই-ই সিনেমা উঠিয়ে নিচ্ছিলো, হাসান আজিজুল হকের সাধাসিধে গল্পের, এক চিত্রনাট্য আবার যেন নামিয়ে দিচ্ছিলো। 

এই অনেক ওঠা-নামা, পাওয়া-না পাওয়া, কম বেশি যখন লক্ষ্য করছিলাম ঠিক তখনই এক জায়গায় আটকে গিয়েছি বারবার। সেটিই পরীর রূপ। রাবেয়া চরিত্রের যে রূপ ছিলো ব্যালেন্সড অভিনয়ে, বাঙালিয়ানা শাড়ীর আঁচলের ভাঁজে ভাঁজে উপচে পড়া লাবণ্যতায়, এমনকি তার নাকের নোলকে অব্দি! এটাই পরীমনি। এখানেই তো তিনি জিতে যান! তিনি আরো একবার প্রমাণ করতে চান, বর্তমানে এই ‘নায়িকা’ শব্দটির মাঝে কতটা গুরুত্ব সহকারে রাজত্ব করেন তিনি! 

গিয়াসউদ্দিন সেলিমের রূপের বর্ণনায় আরেক সংযোজন পেয়েছি। রজব আলী গুণিনের বড় নাতি রহম আলীর স্ত্রী ‘জরিনা’ চরিত্রে করা বিথী রাণী সরকারের মাঝে। সিনেমার সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ক্যারেক্টার। যতটা খারাপ লেগেছে অল্প সময়ের স্ক্রিন প্রেজেন্সে, ততটাই মন ভরেছে তার অভিনয় এবং সৌন্দর্য দেখেও। বংশের বড়ছেলের দায়িত্বশীলা স্ত্রী হিসেবে বেশ গাম্ভীর্যের পাশাপাশি হাস্যময়ী এবং একইসাথে লাস্যময়ী লেগেছে তাকে। তবে, হতবাক তো হয়েছি দিনশেষে জেনে যে, এই বিথী-ই কিনা বহু আগে দেখা গ্রামীণফোনের আলোচিত বিজ্ঞাপন ‘আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলারে’ এর সেই রূপবতী বিথী। ভালো লেগেছে যে, সময় গড়িয়ে গিয়েও, সৌন্দর্য কথা বলে।

শেষাংশে বলবো, গুণিন অনেক ক্ষেত্রেই সুন্দর। আর এই সুন্দরের ক্ষেত্রে অবদান যতটা সুন্দর অভিনয়ের, ততটাই অবদান সৌন্দর্যময়ী আবেদনের রূপকে ধারণ করা রূপবতী মানুষগুলোরও...

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url