Nazmun Munira Nancy : ন্যান্সির তৃতীয় সংসারেও ভাঙ্গনের সুর

ন্যান্সির তৃতীয় সংসারেও ভাঙ্গনের সুর
ন্যান্সির তৃতীয় সংসারেও ভাঙ্গনের সুর

ন্যান্সির তৃতীয় সংসারেও ভাঙ্গনের সুর


বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই গায়িকার নতুন গানের জন্য মুখিয়ে থাকেন ভক্তরা। গত বছরের আগস্টের শেষ সপ্তাহে গীতিকবি মহসীন মেহেদীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এটি ন্যান্সির তৃতীয় বিয়ে। মহসীনের লেখা ‘এমন একটা মন’ শিরোনামের গানে কণ্ঠ দিতে গিয়েই পরিচয় হয় তাদের। সেই থেকে তাদের মধ্যে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। এরপরই বিয়ে করে ঘর বাঁধেন তারা।

নতুন এ দাম্পত্যের ছয় মাসের মাথায় গিয়ে সুখবর দিয়েছিলেন ন্যান্সি। ১৩ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, তিনি আবারো মা হতে যাচ্ছেন। মহসীন মেহেদীর সঙ্গে আংটি বদল থেকে শুরু করে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া পর্যন্ত ধারণ করা কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে স্লাইড-শো ভিডিও বানিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছিলেন ন্যান্সি। 

তবে সেই সুখের খবর এই গায়িকার জীবনে বোধহয় আর সুখের নেই। সম্প্রতি ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সংসার জীবনের অনেক কথাই তুলে ধরেছেন তিনি। সেই পোস্টেই জানিয়েছেন, নতুন এ সংসারেও ভালো নেই তিনি। এই গায়িকা লিখেছেন, “বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।” গত ১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) মাঝরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেন ন্যান্সি। সেই পোস্টটি হাঙ্গামা ২৪-এর পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

আমার আর মেহেদীর সংসার জীবনের বয়স সাত মাস, এদিকে আমি অন্তঃসত্ত্বা। আমাদের দুজনের জন্যই নতুন করে অল্পদিনের পরিচয়ে একজন আরেকজনের জীবনসঙ্গী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিলো। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া যেন আনন্দের চাইতেও দ্বিগুণ ভীতি।

আমার দুই ভাই, ভাবি এবং রোদেলা বাদে দুই পরিবারের কোনো সদস্যদের নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে নেই কোনো উচ্ছ্বাস, উল্টো রয়েছে বিদ্রুপ মেশানো হতাশা। সেইসঙ্গে নতুন অতিথির আগমনের সংবাদে অর্থ বা সম্পদ বণ্টনে কে কী পাবে আর কি হারাবে, সেসব নিয়ে রয়েছে চুলচেরা হিসেব! আমি নিজেও যেন ভাবতে বসলাম, আচমকাই গোলক ধাঁধায় পরে গেলাম। মনে হলো স্বস্তি খুঁজতে গিয়ে অশান্তিকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এলাম। বিয়েটা না করলেই বরং প্রাণে না হলেও জানে বেঁচে থাকতাম।

দুজনই ভালোবেসে যার হাত ধরেছিলাম, সেটা যেকোনো কারণেই হোক, শেষ পর্যন্ত টেকাতে পারিনি। জীবন চলায় ব্যর্থতার তকমা কপালে জুটেছে। এখন দুজন দুজনের কাছে ভালোবাসার পাত্র-পাত্রী হওয়ার চাইতেও আস্থার হয়ে ওঠাটাই যেন বড় পরীক্ষা! আর প্রতিদিনকার জীবন-যাপনের প্রক্রিয়া দুজনের এতটাই ভিন্ন যে, সেটা রপ্ত করাটাও বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার! খাওয়া, ঘুমানো, আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করবার ভঙ্গি, নিত্যদিনের কথা বলা, মত প্রকাশ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ঘুরতে যাওয়া, কাছে আসা- এর সবই যেন নতুন করে শেখবার বিষয়! মনে হলো অল্পদিনেই বেশ হাঁপিয়ে উঠেছি।

মেহেদীর দুই সন্তান তাদের মায়ের বর্তমান স্বামী অর্থাৎ সৎ বাবাকে ঠিকই বহু আগেই হাসিমুখে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সৎ মা হিসেবে আমাকে সহ্যই করতে পারে না। অন্যদিকে আমার ছোট মেয়ে নায়লা মেহেদীকে কোনোভাবেই সম্পর্ক অনুযায়ী সৎ বাবার আসনটুকু দিতে নারাজ। কিন্তু স্বচ্ছন্দে তার বাবার জন্য পাত্রী দেখছে এবং তাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথাও বলছে। 

আর ব্যতিক্রম শুধু আমার বড় মেয়ে রোদেলা। দিনশেষে সে সবাই যার যার মতো করে সুখে আছে এটাই দেখতে চায়। এ কারণে বেচারিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট নোংরা মন্তব্যেরও মুখোমুখি হতে হয়। আমার রোদেলা! সন্তানের চাইতেও বেশি যে আমার জীবনে মায়ের রূপে এসেছে! আজ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলতে রোদেলাই আছে এবং থাকবে জানি।

এই সাত মাসের পথচলায় এতো বেশি হোঁচট খেয়েছি, সম্পর্কের বিষাক্ত দিক দেখেছি, সন্তানের অবহেলা পেয়েছি, অসম্মানিত হয়েছি, কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে যোগাযোগ হারিয়েছি, সৎ ছেলে মেয়ের কাছ থেকে নিজের সম্পর্কে বারংবার কটু কথা শুনেছি। শ্বশুরবাড়ির তিরস্কার দেখেছি, নিজের অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছি, পিতা-মাতাহীন নিজেকে অসহায় ভেবেছি, দুমুখো মানুষ দেখেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি, অবাক হয়েছি, ঘেন্না করেছি, তীব্র ভয় পেয়েছি, কেঁদেছি, টালমাটাল হয়েছি, অভিযোগে দিশেহারা হয়েছি, এতো বছরের সংসার জীবনের মাঝপথে এসে নিজেকে একা আবিষ্কার করেছি, চিৎকার করেছি, গালি দিয়েছি, সুন্দর চেহারার আড়ালে কদর্য রূপ দেখেছি, শিক্ষিত মানুষের বিকৃত রুচি দেখেছি, আধুনিকতার নামে বেলেল্লাপনা দেখেছি, নির্মম সত্যের মুখোমুখি হয়েছি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি, অভিমানে বোবা হয়ে গেছি, বিশ্বাস হারিয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণের শিকার হয়েছি, সব ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছি, নিজের মৃত্যু কামনা করেছি, মানসিক অবসাদে ভুগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি। পূর্বে অনেক চড়াই উৎরাই পার হলেও এতো কিছু একবারে, একসঙ্গে আগে কখনও ঝড়ের গতিতে জীবনে আসেনি। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী!

আমাদের বিয়ের শুরু থেকেই রসালো আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা, নিন্দা, স্বল্পসংখ্যক শুভেচ্ছা, কাল্পনিক গল্পতে ভরপুর ছিল এবং এখনও আছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও বহাল থাকবে। মেহেদী আর আমার একসঙ্গে ছবি দেখলে মেহেদীর সন্তানরা তাদের বাবার ওপর নাখোশ হয়। মেহেদী কষ্ট পায়, সেই কষ্টের রেশ আমার সংসার ছুঁয়ে যায়। নায়লাকে চাইলেও আগের মতো নিজের কাছে এনে রাখতে পারি না। সত্যি বললে দীর্ঘ ১০ মাস হলো সামনাসামনি দেখিনি। আমারও মন ভার হয়, ফলাফল সংসারে শীতল আবহাওয়া। নিজেদের অজান্তেই প্রতিনিয়ত আমরা স্বামী-স্ত্রী একজন অন্যজনের কাছে অপরাধী! এ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট করলে উপহার হিসেবে একগাদা গালি; আতঙ্ক নিয়ে পোস্ট মুছে দিলে পুনরায় সংসার ভাঙার খেতাব! মাঝে মাঝে মনে হয়, বিশ্বজোড়া দজ্জাল শ্বশুরবাড়ি নিয়ে বসে আছি, যাদের কাজ হলো আমার খুঁত ধরা।

এতো কিছুর পরও মেহেদী আর আমি সংসার চালিয়ে যেতে চাই, একসঙ্গে বৈরী পথ চলতে চাই, অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে চাই, একে অপরকে জীবনে প্রথম প্রেমিক-প্রেমিকার মত ভালোবাসি বলতে চাই, হাতের ওপর হাত রেখে ঘুরে বেড়াতে চাই, দিন শেষে সাত মাসের চেনা ঘরে ফিরতে চাই, সংসারের পরিচিত গন্ধে শ্বাস নিতে চাই, নিজেদের আনন্দের মুহূর্তগুলো সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চাই, রাত জেগে অহেতুক ঝগড়া শেষে জড়াজড়ি করে ঘুমোতে চাই। কী অদ্ভুত আমাদের চাওয়া পাওয়া!

উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৬ সালে ভালোবেসে প্রথমবারের মতো বিয়ে করেছিলেন ব্যবসায়ী আবু সাঈদ সৌরভকে। কিন্তু সে ভালোবাসায় ছেদ পরে মাত্র ৬ বছরের মাথায়। এরপর ২০১২ সালের ২৪ মে পারিবারিকভাবে তাদের বিচ্ছেদ হয়। সে সংসারে রোদেলা নামে একটি কণ্যা সন্তান রয়েছে ন্যান্সির। প্রথম সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার পর ২০১৩ সালের ৪ মার্চ দ্বিতীয় বারের মতো বিয়ে করেছিলেন ময়মনসিংহের সরকারি চাকুরীজিবী ও ব্যবসায়ী নাজিমুজ্জামান জায়েদকে। তাদের সংসারেও রয়েছে একটি কণ্যা সন্তান। যার নাম নায়লা। তাদের বিচ্ছেদের সঠিক তারিখ জানা যায়নি। তবে গত বছরের ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকেও আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ন্যান্সি। তখন তিনি একটি ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেছিলেন, “দুটো মানুষ একে অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে বরং সম্মানের সাথে আলাদা হয়ে যাওয়াই শ্রেয়। যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর বাইরেও আমরা দীর্ঘ দিনের বন্ধু, কাজেই বোঝাপড়াটা মন্দ নয়। তবে নাটকীয়ভাবে বলবো না- আমরা আজীবন বন্ধু থেকে যাবো।”

প্রসঙ্গত, সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সির তৃতীয় স্বামী মহসীন মেহেদী একজন পেশাদার গীতিকার। পাশাপাশি তিনি অনুপম মিউজিকের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসেবে কর্মরত আছেন।

হাঙ্গামা/অর্নব
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url