Sohel Chowdhury : সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার নথি গেলো কই?
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার নথি গেলো কই? |
সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার নথি গেলো কই?
এক সময় ঢাকাই সিনেমা দাপিয়ে বেরিয়েছেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। সেসময়ের সবচাইতে স্টাইলিস্ট হিরো হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। এই নায়কের গ্লামারে কাবু হয়েছেন অনেক নারীই। কিন্তু তাদের কেউই স্থান পাননি নায়ক হৃদয়ে। উল্টো চিত্রনায়িকা দিতীর রুপেই ডুবে গিয়েছিলেন সোহেল। ভালোবেসে বিয়ে করে সংসার পাতেন এই তারকা দম্পত্তি। তাদের সেই সুখের সংসার স্থায়ী হরো না বেশিদিন। কালো এক ঝড় এসে কেড়ে নিয়ে গেলো চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীর জীবন। বুলেটের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেলো এই নায়কের বুকের পাজর।
সোহেল চৌধুরী ছিলেন ঢাকার ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান। পরিবারসহ বাস করতেন রাজধানীর বনানিতে। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আদনান সিদ্দিকি নামের এক ব্যক্তিও গ্রেফতার হন। এই ব্যাক্তি ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে জানান, এক শিল্পপতির ফোন পেয়েই ঢাকা ক্লাব থেকে বের হয়ে ঘটনাস্থলে যান চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী। এমন জবানবন্দী দেওয়ার পরই ১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি গুলশান লেডিস পার্কের সামনে থেকে গ্রেফতার হয় আলোচিত শিল্পপতি আজিজ মোহাম্মদ ভাই।
চিত্রনায়ক হত্যাকান্ডের তদন্তের পর ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই নয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে ডিবি পুলিশ। এতে আজিজ মোহাম্মদ ভাই ছাড়াও তারিক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন, ফারুক আব্বাসী, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে আসামি করা হয়।
এরপর বিচার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। এতে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করে এ মামলার অন্যতম আসামী আদনান সিদ্দিকি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে আদেশ দেন যে, রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম নিম্ন আদালতে স্থগিত থাকবে। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকে। এরপর ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ শুনানি শেষে রায় দেন। রায়ে হাইকোর্টের আগের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তখন মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠানোর আদেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই আদেশ আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি। কারণ মাঝপথেই হারিয়ে গেছে সেই আদেশের নথি।
এ হত্যাকান্ডের ২৩ বছর পর খোঁজ নিতে গিয়ে মনে হচ্ছে, পেছন থেকে কেউ পুরো মামলাটি গুম করে দিয়েছে। হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা হলে তারা বলছেন, এই মামলার আসামির তালিকায় একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী আছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের প্রভাবে বিচারকাজ থামিয়ে দিতে উচ্চ আদালতের নথি গায়েব করা হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাত বছর আগের হাইকোর্টের রায়ের সেই আদেশ মামলার মূল নথিতে নেই। জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী ও কর্মচারীরা বলেন, হাইকোর্টের কোনো রায় তাঁরা পাননি। এত দিনে কেউ এ মামলার খোঁজ নিতেও আসেননি। ট্রাইব্যুনালের দৈনন্দিন কার্যতালিকা থেকে দেখা যায়, স্থগিতাদেশের পর মামলার আর কোনো শুনানিও হয়নি।
এই নথি গুম হওয়া নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি একটি গণমাধ্যমে ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনের জেরে নরেচড়ে বসে আদালত। সম্প্রতি সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার নথি গায়েব হওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেল এ রিট দায়ের করেন। রিটে মামলার নথি কেন পাওয়া যাচ্ছে না এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতেও নির্দেশনা চাওয়া হয়।
হাইকোর্টে দেওয়া সেই রিটে পত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদটি যুক্ত করা হয়। এতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্ট ছয়জনকে বিবাদী করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন হাঙ্গামা২৪-কে বলেন, “এ রকম চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিচার এত দিনেও না হওয়া দুঃখজনক। মনে হয় এর পেছনে একটি চক্র রয়েছে। আমরা চাই এ চক্রকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হোক।”
হাঙ্গামা/রাজিব