Mostofa Sarwar Farooki : বায়তুল মোকাররমে শুটিং করতে চান ফারুকী!

Mostofa Sarwar Farooki - মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
Mostofa Sarwar Farooki - মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

বায়তুল মোকাররমে শুটিং করতে চান ফারুকী!


ঢাকাই সিনেমার তারকা নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন এই নির্মাতা। এবার শুটিংয়ের জন্য বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম ব্যবহারের অনুমতি চাইলেন তিনি। শুধু তাই নয়, এমনকি জাতীয় সংসদ ভবনেও শুটিং করার অনুমতি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ফারুকী।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজস্ব ভেরিফায়েড ফেসবুক একাউন্টে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এমন দাবি জানিয়েছেন এই পরিচালক। তিনি মনে করেন, আইকনিক এসব স্থানে শুটিংয়ের অনুমতি পেলে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার দীর্ঘ লেখার শুরুতেই বর্হিবিশ্বের কিছু উদাহরণ টেনেছেন।

‘ডুব’ খ্যাত এ পরিচালক লিখেছেন, “অস্ট্রেলিয়া বললে আমাদের চোখে কোন ইমেজ ভাসে? সিডনি অপেরা হাউজ আর হারবার ব্রিজ। কখনো নরমাল টাইমের ছবি, কখনো বা ভাসে থার্টি ফার্স্ট সেলেব্রেশনের আলোকসজ্জাসহ ছবি। সাথে সাথে আমাদের মনের মধ্যে একটা আর্কিটেকচারালি রিচ ফুর্তিবাজ দেশের পারসেপশন তৈয়ার হয়। আদতে এই জায়গাটা সিডনির খুব ছোট একটা অংশই। বৃহৎ সিডনি মূলত শান্ত শীতল এক কান্ট্রিসাইড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ভাবলে আপনার মাথায় অলস-শান্ত-শীতল কোনো জায়গা মনে না হয়ে আর্কিটেকচারালি রিচ ফুর্তির জায়গা যে মনে হয়, এটা ইমেজের ম্যাজিক। সারা দুনিয়ার পত্রিকায় এবং আপনার নিউজফিডে এতো এতো বার অপেরা হাউস আর হারবার ব্রিজের ছবি ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে যে আপনার মাথায় এটা গেঁথে যাচ্ছে। এখন একবার ভাবেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার যদি আইন করে এই সব জায়গায় ছবি তোলা যাবে না বা শুটিং করা যাবে না, তাহলে কিন্তু আর এই ইমেজটা আপনার মাথায় গাঁথতো না।”

জাতীয় সংসদভবন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের একটা সংসদ ভবন আছে। যেটা সারা পৃথিবীতে একটা আইকনিক স্ট্রাকচার হিসেবে আমরা হাজির করতে পারতাম। কিন্তু আপনি সেখানে শুট করতে পারবেন না, কারণ সেটা কেপিআই জোন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে শুট করা সম্ভব যেটা অনেকের পক্ষেই পাওয়া কঠিন। তাই বলি, আপনি আপনার দেশের সেরা জায়গাগুলোতে যদি শুট না করতে দেন, তাহলে তো আপনার আফসোস করা উচিত না যে ‘তোমরা বাংলাদেশকে প্রপারলি দেখাও না’।”

ফারুকী ইসলাম ধর্মের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন যে- এই ধর্মের রিচুয়াল সঠিকভাবে চলচ্চিত্রে ফুটে উঠে না। সে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আরেকটা কথা মাঝে মধ্যে শুনি। হিন্দু বা খ্রীষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠানগুলা বাইরের ফিল্মমেকাররা এতো সুন্দর করে তুলে ধরে, আমাদের ফিল্মমেকাররা মুসলমানদের রিচুয়ালগুলাকে সেভাবে তুলে ধরে না। কথা সঠিক। কিন্তু যারা এই কথাগুলা বলে তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করি ‘আমার একটা দৃশ্যের জন্য বায়তুল মোকারম মসজিদের ভেতরে শুট করা দরকার, যেখানে দেখা যাবে হাজার হাজার লোক একসাথে জুমা আদায় করছে। একটু জোগাড় করে দিতে পারবেন?’ সাথে সাথে দেখি উনারা আমতা আমতা করতে থাকেন। আপনি মসজিদে শুট করতে দিবেন না, কিন্তু চাইবেন আপনার ধর্মের সুন্দর রিচুয়ালগুলা মানুষ জানুক, সেটা কীভাবে হবে?”

“আপনার প্রার্থনার সুন্দর এবং পবিত্র জায়গার ছবি তুলে প্রচারের মাধ্যমে সেটার সৌন্দর্য কমে না, পবিত্রতাও কমে না। বরং অনেকের কাছে সে সৌন্দর্য পৌঁছানোর একটা রাস্তা হয়। সংসদ ভবন বা এইরকম বিশেষ স্থাপনার ছবি তুলে প্রচারের মাধ্যমে এর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় না। আজকাল গুগল ম্যাপেই সব টার্গেট দেখা যায়। শুটিংয়ের ফুটেজ থেকে ছবি নিয়ে নিরাপত্তার প্রতি হুমকি তৈরি করতে হয় না।”

দেশের গুরুত্ত্বপূর্ণ ও আইকনিক এসব স্থানে শুটিংয়ের অনুমতির জন্য একটি ফিল্ম কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন ‘ব্যাচেলর’খ্যাত এই নির্মাতা। এ পরিচালক বলেন, “যে কথা বলতে এতো কথার অবতারণা, দয়া করে শুটিংয়ের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দেন। একটা ফিল্ম কমিশন গঠন করেন যেখানে লোকেশন সার্ভিস ডেস্ক থাকবে। যার যেখানে শুট করা প্রয়োজন সেটা উল্লেখ করে ওই কমিশনে আবেদন করবে। সঙ্গে নির্ধারিত ফি-ও জমা দিবে এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের অনুমতি দিয়ে দেয়া হবে; সঙ্গে ধরিয়ে দিতে পারেন লোকেশনের নির্ধারিত নিয়ম কানুন। ব্যস, সবকিছু সুন্দর একটা সিস্টেমে চলে আসলো। সারা পৃথিবীতেই এই ফিল্ম কমিশন এবং লোকেশন সার্ভিস ডেস্ক আছে। দয়া করে আমাদের এখানেও এটা চালু করেন।”

উল্লেখ্য, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ইতোমধ্যে দুটি নতুন সিনেমার কাজ শেষ করে রেখেছেন। এগুলো হলো ‘শনিবার বিকেল’ ও ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’। দুটি সিনেমাই বিশ্বের বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। তবে এগুলো এখনো দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি।

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url