এই কান্নার শেষ কোথায়?

এই কান্নার শেষ কোথায়?
এই কান্নার শেষ কোথায়?

এই কান্নার শেষ কোথায়?


‘চোখের জলে যদি হতে পারে নদী’- কন্ঠশিল্পী আসিফের জনপ্রিয় এই গানের সাথেই কি পাল্লা দিলেন শিল্পীরা নাকি ‘ক’ফোটা চোখের জল ফেলেছো যে তুমি ভালোবাসবে’- মান্নাদের এই বিখ্যাত গানের মতোই তাদের ভালোবাসার প্রমাণ দিতে চেয়েছেন? হয়তো চোখের জলে ভালোবাসারই প্রমাণ দিতে চেয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের শিল্পীরা।

শুরু থেকেই নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ও ক্ষমতা গ্রহণ। এবারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক সময়ই নিজেকে সামলাতে পারেননি তারা। ঢেলে দিয়েছেন নিজের আবেগকে। যত্রতত্র কেঁদেছেন শিল্পীরা। তাদের কান্নার তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। তবে এই কান্না নিয়ে কাঁদা ছোড়াছুড়িও কম হয়নি। সামাজিক মাধ্যমে নিন্দা ও ট্রোরের শিকার হতে হয়েছে শিল্পীদের। তাদের এই কান্নাকে কেউ বলছেন মায়াকান্না, আবার কেউ কেউ মানবিক দিক দিয়েই বিচার করছেন।

অভিনেত্রী জেসমিন
অভিনেত্রী জেসমিন


২০২২-২০২৪ মেয়াদের এবারের নির্বােচনকে ঘিরে প্রথম কান্নার তালিকায় নিজেকে যুক্ত করেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী জেসমিন। গত ৯ জানুয়ারি ইলিয়াস কাঞ্চন ও চিত্রনায়িকা নিপুণের প্যানেল ঘোষণার অনুষ্ঠানে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান কমিটির বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেলেন তিনি। অবাক করা ব্যাপার হলো, সেদিন তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েই কেঁদেছিলেন।

নায়ক রিয়াজ
নায়ক রিয়াজ


এর কদিন পরই এফডিসিতে ভোট চাইতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন নায়ক রিয়াজ। জায়েদ-মিশা প্যানেলের সিদ্ধান্তে বাদ পরা ১৮৪ জন শিল্পীদের নিয়ে কথা বলতে গিয়েই কান্না করেন তিনি। রিয়াজের সেই হাউ মাউ করে কান্নার ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে পড়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। তার এই কান্নার দৃশ্য নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। এমনকি জায়েদ খান তার এই সিনিয়র শিল্পীকে নিয়ে বলেছিলেন, “রিয়াজ ভাই মায়া কান্না কাঁদছেন।” এতোকিছুর পর কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের সহ-সভাপতি পদপ্রার্থী এই অভিনেতা অভিমান করে সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, “কেঁদে যদি ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দেবেন।”

নাসরিন
নাসরিন


জেসমিন ও রিয়াজের পর এই আলোচিত কান্নার মিছিলে যোগ দিয়েছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী নাসরিন। নির্বাচনের শুরুতে প্রার্থী হয়েও পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। আর সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়েই কেঁদে ফেলেন নাসরিন। যদিও তার কান্নাকে সবাই আবেগের কান্না বলেই মানবিক দিক দিয়ে বিচার করেছেন।

জায়েদ খান
জায়েদ খান


এর কিছুদিন পর কাঁদলেন জায়েদ খান নিজেও। নির্বাচনি বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কিছু কষ্টের কথা বলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার মা মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন, ‘‘তোমার আর বিয়ে করা লাগবে না। তুমি সমিতি নিয়েই থাকো।’’ জায়েদের এ কান্নায় অবশ্য কেউই তেমন কর্ণপাতই করেনি।

সাদিকা পারভীন পপি
সাদিকা পারভীন পপি


এরপরই কান্নার তালিকায় যুক্ত হলেন দীর্ঘদিন অন্তরালে থাকা জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। ভোটের মাত্র কদিন আগেই হঠাৎ করেই তিনি একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন। সে ভিডিওতে পপি কান্না জড়িত কন্ঠে তার সদস্যপদ বাদ দেয়া নিয়ে জায়েদ-মিশা কমিটির প্রতি আক্ষেপ প্রকাশ করে। এমনকি তিনি জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ‘বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি’র অভিযোগও তুলেছেন।

নায়িকা নিপুণ
নায়িকা নিপুণ


কান্নার মিছিল এখানেই শেষ হলেও পারতো! কিন্তু না, কান্নার এই মিছিলে যোগ দেন নায়িকা নিপুণও। গত শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গঠিত আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তে বিনা প্রতিদদ্ধিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। আপিল বোর্ডের রায় নিজের পক্ষে আসায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নিপুণ। বোর্ডের নতুন এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে ফেলেন এই নায়িকা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কেঁদে কেঁদে তিনি বললেন, “সত্যের জয় হলো”।

নাজিম উদ্দিন
নাজিম উদ্দিন


এদিকে কান্নার শেষ তালিকায় যুক্ত হলো আরো একটি নাম। তবে তিনি এবারই প্রথম কাঁদলেন, বিষয়টা এমন নয়। চিত্রনায়ক রিয়াজের কান্নার সময়ও তিনি গলা মিলিয়ে কেঁদেছিলেন। তিনি প্রবীন সহশিল্পী নাজিম উদ্দিন। তবে এবার আর কষ্টের কান্না নয়, তিনি এবার কেঁদেছেন বিজয়ের আনন্দে। আপিল বোর্ডের ঘোষণা অনুযায়ী চিত্রনায়িকা নিপুণ সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হওয়ায় খুশিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন আর কাঁদছিলেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, “আজ আমাদের ঈদ। এটি সত্যের জয়। জায়েদ খানরা আমাদের অন্যায়ভাবে বাদ দিয়েছিল। নির্বাচনের আগে থেকে আমি কাঞ্চন ভাই আর নিপুণ আপার জন্য দোয়া করেছি। তারা যেন নির্বাচিত হন।”

২৮ জানুয়ারি ভোট কার্যক্রম শেষ হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন যেনো শেষ হচ্ছে না। আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ আসায় পদ হারিয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। শোনা যাচ্ছে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল বিভাগে যাবেন। তার মানে নাটকিয়তার এখানেই শেষ নয়। এই জটিলতা কাটতে কাটতে কান্নার তালিকাও হয়তো আরো দীর্ঘ হবে! কবিগুরু রবী ঠাকুরের ‘হইয়াও যেন হইলো না শেষ’ সেই কথাটির মতোই যেনো হয়ে গেলো এবারের নির্বাচন। তবে এই নাটকিয়তার শেষ কোথায়? এর উত্তর যেমন জানা নেই, তেমনি কান্নার শেষ কোথায় তার উত্তর মিলছে না এই মুহূর্তে। এমনটাই বলছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ‘এখন দেখা যাক শিল্পী সমিতির জল কোথায় গিয়ে গড়ায়?’

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url