মা-বাবার বুকে ফিরতে পারবেন সাবরিনা?
মা-বাবার বুকে ফিরতে পারবেন সাবরিনা? |
মা-বাবার বুকে ফিরতে পারবেন সাবরিনা?
আটকা পড়েছেন দুরের একটি দেশে। নিজের দেশে যাওয়ার উপায় নেই। তার চেনা শহর, অলি-গলি বোমার আঘাতে গুঁড়িয়ে গেছে। ধ্বংসপ্রায় নিজের জন্মভূমি। সেখানেই রয়েছে বাবা-মা ও প্রিয় পরিজনেরা। এই জীবনে কি আর তাদের দেখা পাবেন? বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন আপনজনকে? এমন প্রশ্নই বারবার সামনে আসছে সাবরিনার। তিনি যুদ্ধগ্রস্থ ইউক্রেনের সাবেক মডেল।
মনের ভের উঁকি দেওয়া এমন সব প্রশ্নের বেড়াজালে তার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। কিন্তু কিছুই করার নেই তার। এই মডেল এবার আটকা পড়েছেন ভারতে। আর পরিবার-পরিজনেরা রয়েছেন দক্ষিণ ইউক্রেনের আতঙ্কগ্রস্থ শহর খেরাসনেই। তাদের খাবারও ফুরিয়ে আসছে। যা আছে তাতে আর অল্প কদিন কোনরকমে আধপেট খেয়ে থাকতে পারবেন তারা। এরপর কী হবে? এ উত্তর জানা নেই কারোই।
ইউক্রেনের সাবেক মডেল সাবরিনা বর্তমানে রয়েছেন ভারতের মুম্বাই শহরে। তিনি ভয় পাচ্ছেন, আদৌ কখনোও কি আর ঘর, পরিবারের সাক্ষাৎ পাবেন তিনি। গত জানুয়ারিতে ব্যবসায়িক কাজে ভারতে এসেছেন তিনি। আগামী সপ্তাহেই দেশে ফেরার কথা ছিল। গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দেবেন, এমন ইচ্ছেই ছিল সাবরিনার। কিন্তু আগ্রাসি পুতিনের রুশ আগ্রাসন তাঁর সব স্বপ্ন ভেস্তে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, “গত জানুয়ারিতে দেশ ত্যাগ করি। আর এখনও আমি জানি না কবে, কখন অথবা আদৌ পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে কি না।”
সংবাদমাধ্যমে সাবরিনা বলেন, “আমি এখনও হতভম্ভ। আমি খবর দেখছি—যেখানে যে কেউ ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশ থেকে হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখতে পারে। আমি যখনই তাদের দেখি, আমাকে নাড়া দেয়। আমি দুঃস্বপ্নে বাস করছি এবং প্রতি মুহূর্তে আমার পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি। আমি এই মুহূর্তে শুধু একটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ যে তাদের এখনও ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।”
ইউক্রেনের সাবেক এই মডেল জানান, তাঁর মা-বাবা ও বোন আলাদা শহরে বাস করেন। তারা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। তাদের ঘুম আর ঘড়ির এলার্মে নয় বরং বোমার শব্দে ভাঙছে। পুরো ইউক্রেনে খেরাসান ছিলো খুব শান্ত শহর। কিয়েভের মতো অতো বড় শহর নয় খেরাসন। মানুষ যে লুকিয়ে থাকবে সে অবস্থাও নেই।
সাবরিনার মা-বাবা, দাদা-দাদি ও পাঁচ বোন সেখানে রয়েছেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দুচোখে শুধু শুণ্যতা দেখছেন তিনি। সংবাদমাধ্যমে এই মডেল বলেন, ভারতে তিনি ভালো আছেন না কি খারাপ আছেন, সেটাও বুঝতে পারছেন না। এসব বোঝার মতো বোধটুকু এখন তাঁর নেই।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার আগ্রাসী হামলায় ইউক্রেনে ২৪০ বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬৪ জন মারা গেছেন। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় সংস্থা (ওসিএইচএ) রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী তাদের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি।
হাঙ্গামা/অভিজিৎ