Ayesh Arif Khan : বাংলাদেশের সিনেমায় ভারতের সেই আয়েশা

বাংলাদেশের সিনেমায় ভারতের সেই আয়েশা
বাংলাদেশের সিনেমায় ভারতের সেই আয়েশা

বাংলাদেশের সিনেমায় ভারতের সেই আয়েশা


২০১৮ সালে রাজস্থানের বাসিন্দা আরিফ খান বিয়ে করেন আয়েশা আক্তারকে। বিয়ের পর থেকেই আরিফ এবং তার বাড়ির লোকেরা যৌতুকের জন্য তার ওপর অত্যাচার করত। মানসিক ও শারিরিক কোনভাবেই থেমেছিলো না অত্যাচার। দিনের পর দিন মুখ বুজে সহ্য করতে করতে একসময় যখন দিশেহারা হয়ে পরে তখন রাজস্থানের ভাতভা থানায় মামলা করে আয়েশা। সে মামলায় আসামী করা হয় আয়েশার শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী আরিফকে।

মামলার পরেও থামেনি তারা। জামিনে বের হয়েই আবার শুরু হয় নির্যাতন। সহ্য করতে না পেরে দুবার বাবার বাড়িতেও ফিরে যান। কিন্তু বাস্তবতা খুবই কঠিন। পাড়া-পরশির কথার চাপে স্বামীর বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। কিন্তু সর্বশেষ সহ্য করতে না পেরে থানা কিংবা বাবার বাড়ি কোথাও যায়নি। তেনোই বা যাবে? কার বিরুদ্ধে এ লড়াই করবে? তারা তো তার আপন মানুষই। হাল ছেড়ে দেয় আয়েশা।

২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। আয়েশা চলে যান তার প্রিয় নদী সবরমতীর পাড়ে। নদীটি ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে অবস্থিত। সেখানে দাড়িয়ে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। ভিডিও বার্তায় দেখা যায় হাসিখুশি আয়েশা আরিফ খান। শুরুতে বলেন, আমি আয়েশা। খানিকক্ষণ থেমে বলেন, “আরিফ খান। আয়েশা আরিফ খান। আমি এখন যা করতে যাচ্ছি, তার জন্য কেউ আমায় বাধ্য করেনি। আমি স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে করতে যাচ্ছি। এখন আমি বিশেষ কিছু বলতে চাই। শুধু এটুকু বুঝেছি, আল্লাহ আমাকে ছোট্ট জীবনই দিয়েছিলেন।”

এটুকু বলেই গলা কেঁপে ওঠে তার। নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে আয়েশা বলেন, “স্বামী মুক্তি চেয়েছিলেন। তাই তাঁকে মুক্তি দিতে চাই। আল্লাহর সঙ্গে আমার দেখা হবে, এতেই আমি খুশি। তাঁকে জিজ্ঞেস করব, আমার কি ভুল ছিল! আর আরেকটা বিষয় শিখেছি, এক তরফা প্রেম করা একেবারেই উচিত না। তা থেকে কিছুই পাওয়া যায় না।”

বাবার উদ্দেশ্যে আয়েশা বলেন, “বাবা, আর কতদিন আমরা আপনজনদের সঙ্গে লড়াই করব? আয়েশাকে আর লড়াই করতে বোলো না কারণ আয়েশা আর যুদ্ধ করতে চায় না। আরিফ স্বাধীনতা চায়, ও এখন থেকে মুক্ত। আমি খুব খুশি। আল্লার সঙ্গে দেখা হলে আমি জানতে চাইব কী ভুল করেছিলাম আমি? আমি এই ছোট্ট জীবনে দারুণ বাবা-মা, বন্ধুদের পেয়েছিলাম। তবু ভাগ্যে কিছু একটার অভাব রয়ে গেল। আমার আর কিছু বলার নেই।”

তাঁর শেষ কথা, “এই নদীটা ভীষণ সুন্দর। এটা আমার খুব প্রিয়। আশা করছি এটা আমাকে গ্রহণ করবে। আমি হাওয়ার মতো, ভেসে যেতে চাই। আমি আজ সত্যিই খুশি, আমার জন্য প্রার্থনা করুন। জানি না জান্নাতে যেতে পারব কি না।” এ কথা শেষ করেই তার প্রিয় সবরমতীর বুকে ঝাপিয়ে পড়েন আয়েশা। জাগতিক যাবতীয় অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পেতে বেছে নেন আত্মহননের পথ।

আয়েশার সেই ভিডিও বার্তা তখন পুরো বিশ্বব্যাপি আলোড়ন তুলেছিলো। এবার সেই ঘটনাকে উপজীব্য করে বাংলাদেশে নির্মিত হচ্ছে সিনেমা। নির্মাতা শামীম আহমেদ রনী নির্মাণ করতে যাচ্ছেন সিনেমাটি। ‘ইয়াসমিন’ শিরোনামের এ সিনেমার গল্প লিখেছেন দেলোয়ার হোসেন দিল। জানা গেছে এতে আয়েশার স্বামী আরিফের চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা আজাদ আদর। তবে আয়েশার চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তা এখনো গোপন রেখেছেন পরিচালক।

এ প্রসঙ্গে নির্মাতা রনী বলেন, “আয়েশার চরিত্রে অর্থাৎ আমার সিনেমায় ইয়াসমিন চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নতুন-পুরোনো মিলিয়ে বেশ কয়েকজনের অডিশন নিয়েছি। তাদের থেকেই একজনকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।”

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url