Raima Islam Shimu : যে কারণে খুন হন নায়িকা শিমু
Raima Islam Shimu - রাইমা ইসলাম শিমু |
যে কারণে খুন হন নায়িকা শিমু
ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি টুকরো লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে খুন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে শিমুর স্বামী নোবেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন। এই নায়িকার লাশ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
গত ১৭ জানুয়ারি (সোমবার) ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর থেকে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আলিপুর ব্রিজ সংলগ্ন কদমতলীর এলাকায় সেদিন সকালে স্থানীয় লোকজন থানায় খবর দিলে সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং উদ্ধার করে। তৎক্ষনাত তার পরিচয় জানতে না পারলেও দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, বস্তাবন্দি লাশটি ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর।
এর আগে লাশ উদ্ধারের পর মরদেহটি সুরতহাল প্রতিবেদন শেষ করে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) পাঠানো হয়। এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবু সালাম মিয়া বলেন, “নিহত তরুণীর মরদেহটি টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। নিহতের গলায় একটি দাগ রয়েছে। তার নাক, কান দিয়ে রক্ত বের হতেও দেখা গেছে।”
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিমুকে হত্যা করার কারন জানিয়েছে নোবেল। এ প্রসঙ্গে পুলিশ জানায়, চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুকে (৩৫) প্রাথমিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন তার স্বামী নোবেল। পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার।
এসপি মারুফ বলেন, এই ঘটনার পর আমরা শিমুর স্বামী নোবেল ও বন্ধু ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনি। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সংশ্লিষ্টতা প্রতীয়মান হওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে হত্যার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তাদের পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে কলহ চলছিলো। আর এই কলহের জেরেই তাকে (শিমু) হত্যা করা হয়েছে বলে জানায় নোবেল। আর হত্যার পর লাশ গুমে সে বন্ধু ফরহাদের সহযোগিতা নেয়।”
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাড়িচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে র্যাবের কাছে তিনি কিছু তথ্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বামী নোবেল এ খুনের দায় স্বীকার করেছেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া খুনের আলামত প্রাইভেটকারের ব্যাকডালায় রক্ত দেখা গেছে। প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে।
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার বাসায় থাকতেন শিমু। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় রাতেই কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরদিন সোমবার (১৭ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জের হজরতপুর ব্রিজের কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশ থেকে শিমুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, অভিনেত্রী শিমু বড় পর্দায় পা রাখেন ১৯৯৮ সালে। বর্ষীয়ান নির্মাতা কাজী হায়াত পরিচালিত ‘বর্তমান’ সিনেমায় প্রথমবার অভিনয় করেন তিনি। এ সিনেমায় তিনি তৎকালিন সুপারস্টার মান্না, মৌসুমী ও ডিপজলের সঙ্গে অভিনয় করেন এই নায়িকা। এরপর টানা ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সবশেষ তাকে দেখা গেছে ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘জামাই শ্বশুর’ শিরোনামের একটি সিনেমায়। এ কারণেই তিনি বর্তমান প্রজন্মের দর্শকদের কাছে তেমন পরিচিত নন।
সিনেমা থেকে সরে এলেও তিনি নিয়মিত হন ছোট পর্দায়। তিনি অর্ধশতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। এ সময়ের আলোচিত ধারাবাহিক ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’এ দেখা গেছে এই অভিনেত্রীকে। জানা গেছে তার নিজের একটি প্রোডাকশন হাউজও রয়েছে। দুই দশকেরও বেশি সময় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করেছেন শিমু।
হাঙ্গামা/সানজানা