Puneeth Rajkumar : এক সুপার-হিরোর গল্প ‘দ্য ম্যান অব গোল্ডেন হার্ট’

Puneeth Rajkumar
Puneeth Rajkumar

একজন সুপার-হিরোর গল্প


পুনিত রাজকুমার। মানবিকতা ও মানবতার এক অনন্য নাম। যিনি মাত্র কয়েকদিন আগেই কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। কথা হচ্ছে ভারতের কন্নড় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সুপারস্টার পুনিত রাজকুমারের। বহুগুণে গুনান্বিত এই মানবিক দেবতা যেমনি তার অভিনয়গুণে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা, তেমনি কন্ঠের গায়কি যাদুতে মন কেড়েছেন কোটি শ্রোতার।

কন্নড় সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা-গায়ক পুনিত গত ২৯ অক্টোবর জিমনেশিয়ামে শরীরচর্চা করতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাথে সাথে হাসপাতালে নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর। ৩১ অক্টোবর বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এ তারকা অভিনেতার।

অসাধারণ এই অভিনেতা ও গায়ক ব্যক্তিগত জীবনে খুবই উদার মনের মানুষ ছিলেন। শোবিজের আলো ঝলমলে জৌলুশের পেছনে তার রুপ ছিলো একদম ভিন্ন। যা উদারতা ও মানবতায় পরিপূর্ণ। তার এমন চরিত্রের কারণে সিনেমার নায়ক নয় বরং দেবতার রুপে গেথ গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষের মনে। আর এ কারণেই তার মৃত্যুর খবর শুনে ভক্তরা করেছেন আত্মহত্যা। আবার কেউ কেউ মারা গেছেন তার শোক সহ্য করতে না পেরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। তার ভক্তদের অনেকেই পুনিতকে সুপার হিরোর সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করেন। এমনকি তার মৃত্যুর সংবাদ পড়তে গিয়ে কেঁদেছেন সংবাদ পাঠিকাও।

অনেক্ষেত্রেই পরিবারের শিক্ষাটা প্রধান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বলতে গেলে পুনিতের ক্ষেত্রে বিষয়টা তেমনই। তার প্রয়াত বাবা ডা. রাজকুমার ছিলেন কন্নড় সিনেমার ‘ম্যাটিনি আইডল’। তিনি উদ্যোগ নিয়েছিলেন কিছু জনকল্যাণমূলক কাজের। নির্মান করেছিলেন বেশ কিছু বিনা বেতনের স্কুল ও অনাথ আশ্রম। তার এসব সামজিক কর্মকাণ্ড থেকেই শিক্ষা নিয়ে নিজেকেও সমর্পিত করেছেন পুনিত।

বাবা শুরু করা উদ্যোগকে আরো গতিশিল ও বেগবান করেন পুনিত রাজকুমার। নির্মান করেন আরো কিছু স্কুল ও অনাথ আশ্রম। জানা যায়, কর্ণাটকের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি স্কুলে বিনা বেতনে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করতেন পুনিত। প্রায় ১ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর ভার ছিল এই সুপারহিরোর কাঁধে। এ ছাড়া তার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো ২৬ টি অনাথাশ্রম, ১৯টি গরুর খামার এবং ১৬টি বৃদ্ধাশ্রম। পুনিতের মৃত্যুতে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে শোকের মাতম। সংশ্লিষ্ট সবাই কাঁদছেন তাদের প্রিয় এই মানুষের জন্য। তাদের কাছে পুনিত অভিনেতা ছিলেন না, ছিলেন সাক্ষাৎ দেবতা।

পুনিতের বন্ধু ছিলেন দক্ষিণী সিনেমার আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা বিশাল কৃষ্ণ রেড্ডি। প্রিয় বন্ধুর এমন জনকল্যাণ মূলক কাজ এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন তিনি। এ বিষয়ে বিশাল বলেছেন, - ‘পুনীত রাজকুমার ১ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ভার নিয়েছিলেন। পুনিত যা শুরু করেছিল তাতে আমি গর্বিত। আজ থেকে এটি আমি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এখন থেকে এসব শিক্ষার্থীদের সকল দায়িত্ব আমার।’

একজন মানুষ কতটা মহান ও মানবিক হতে পারে তার উত্তর খুজলে অন্যতম নাম হবে কন্নর সুপাস্টার পুনিত রাজকুমারের। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে তিনিই একমাত্র নায়ক যে কিনা মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই নিজের মৃত্যুর আগে নিজের চক্ষু দান করে গেছেন অসহায়দের কল্যানে।

এ ক্ষেত্রেও বাবার দেখানো পথেই হেটেছেন পুনিত। তার প্রয়াত বাবা ডা. রাজকুমার ১৯৯৪ সালে চক্ষুদান করেছিলেন। আর যোগ্য বাবার যোগ্য ছেলে হয়ে সেই ধারা অব্যাহত রেখেছেন পুনিত রাজকুমার নিজেও। এর ফলে পুনিতের দেয়া চোখে ইতোমধ্যে আলো ফিরে পেয়েছেন চার অন্ধ ব্যক্তি। যার মধ্যে তিনজন ছেলে ও একজন মেয়ে বলে জানা গেছে।
 
পুনিত রাজকুমারকে কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সব থেকে ধনী অভিনেতা হিসেবে গণ্য করা হত। তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেছিলেন। শুরুর দিকে ১২টি সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বড় পর্দায় নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ২০০২ সালে ‘আপ্পু’ সিনেমায় অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান পুনিত । এরপর একাধারে প্রায় ২৯ টি সিনেমায় অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন এ অভিনেতা।

হাঙ্গামা২৪

সব খবর সবার আগে জানতে ভিজিট করুন https://bnbd24.com/
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url