Amit Hasan : নায়ক নাকি খলনায়ক?

Amit Hasan - অমিত হাসান
Amit Hasan - অমিত হাসান

নায়ক নাকি খলনায়ক?


ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় একজন অভিনেতা হচ্ছেন অমিত হাসান। তিনি অবশ্য প্রযোজনার সাথেও যুক্ত রয়েছেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে এই অভিনেতা নায়কের চরিত্রে রুপদান করেই জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তবে ২০১২ সালে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল সিনেমা ‘ভালোবাসার রঙ’ - এর মাধ্যমে খলনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ইতোমধ্যে এই চরিত্রেও সফল হয়েছেন অমিত।

১৯৬৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার বানিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অমিত হাসান। এটি তার আসল নাম নয়। জন্মের পর তার মা মালিহা রহমান নাম রেখেছিলেন খন্দকার সাইফুর রহমান। এরপর শিক্ষাজীবনে তার এক প্রেমিকা ভালোবেসে তাকে ‘অমিত হাসান’ বলে ডাকতেন। বর্তমানে প্রেমিকার দেয়া সেই নামেই পরিচিত হয়েছেন তিনি।

জনপ্রিয় এই অভিনেতা সিনেমার দুনিয়ায় পা রাখেন ১৯৮৬ সালে। এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পথচলা শুরু তার। এরপর বড়পর্দায় অভিষেক হতে সময় লাগে চার বছর। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘চেতনা’ মুক্তি পায় ১৯৯০ সালে। যার পরিচালক ছিলেন ছটকু আহমেদ। তবে একক নায়ক হিসেবে সফলতা পান বরেণ্য পরিচালক মনোয়ার খোকনের নির্মিত ‘জ্যোতি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে।

এরপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। নব্বয়ের দশকের এই সময়টায় তিনি উপহার দিয়েছেন একের পর এক সুপারহিট সিনেমা। শেষ ঠিকানা, জিদ্দী, বিদ্রোহী প্রেমিক, তুমি শুধু তুমি, বাবা কেন চাকর, রঙিন উজান ভাটি, ভালবাসার ঘর'র মতো সিনেমাগুলো রয়েছে তার ঝুলিতে। এই দশকের শেষের দিকে বাংলা চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা ঢুকে গেলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই নায়ক। এর মাঝে দু-একটি সিনেমায় অভিনয় করলেও তা তেমন গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করতে পারেনি। 

সিনেমার অশ্লিল যুগ কেটে যাওয়ার পর অমিত হাসান আবার নিয়মিত হয়েছেন পর্দায়। তবে এবার আর নায়ক রুপে নয়, বরং খল নায়ক রুপে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ২০১২ সালে শাহিন সুমন পরিচালিত সিনেমা ‘ভালোবাসার রঙ’ - এর মাধ্যমেই তাকে খলনায়ক রুপে দেখতে পায় দর্শকেরা। এই চরিত্র তাকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা বিভাগে বাচসাস পুরস্কার।

খলনায়ক হিসেবে প্রথম সিনেমাতেই তাক লাগিয়ে দেন অমিত। এরপর একের পর এক সিনেমায় খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এরমধ্যে ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘রক্ত’, শামীম আহমেদ রনির ‘বসগিরি’, শফিক আচার্য্যর ভৌতিক চলচ্চিত্র ‘মায়াবিনী’ অন্যতম। এই চরিত্রে ব্যপক দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ায় সুযোগ তৈরি হয় দেশের বাইরের সিনেমায় অভিনয়ের। ২০১৬ সালের শেষের দিকে মুক্তি পায় ‘নবাব’, ‘বস - ২’, ও ‘রাজনীতি’। বাংলাদেশ ভারতের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘বস - ২’তে প্রথমবার টালিগঞ্জ সুপারস্টার জিতের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছিলেন বাবা যাদব।

অমিত হাসানের অভিনয়ের পাশাপাশি আরো একটি পরিচয় রয়েছে। আর তা হলো তিনি মাঝে যখন অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তখন নাম লিখিয়েছেন প্রযোজনায়। চালু করেন প্রযোজনা সংস্থা ‘টেলিভিউ’। এই সংস্থার প্রথম চলচ্চিত্র ‘কে আপন কে পর’ মুক্তি পায় ২০১১ সালে। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিত হাসান নিজেই এবং তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস। এছাড়া আরও অভিনয় করেন আলমগীর, ববিতা, মিজু আহমেদ, মিশা সওদাগর প্রমুখ। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আলমগীর ও ববিতা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ‘কে আপন কে পর’ শিরোনামের এই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন শাহীন-সুমন।

অমিত হাসান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। ২০১৫-২০১৬ মেয়াদের কমিটিতে নির্বাচিত হয়ে এই দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তবে ২০১৭ সালে পুনরায় নির্বাচন করলে মিশা-জায়েদ প্যানেলের কাছে হেরে যান এই সফল অভিনেতা ও প্রযোজক।

অমিত হাসানের চলচ্চিত্রের তালিকা (সাল - চলচ্চিত্র - পরিচালক)

* ১৯৯০ - চেতনা - ছটকু আহমেদ
* ১৯৯০ - দাঙ্গা ফ্যাসাদ - চাষী নজরুল ইসলাম
* ১৯৯৬ - বিদ্রোহী প্রেমিক - আবিদ হাসান বাদল
* ১৯৯৭ - বাবা কেন চাকর - নায়ক রাজ রাজ্জাক
* ১৯৯৭ - তুমি শুধু তুমি - আবিদ হাসান বাদল
* ১৯৯৭ - রঙিন উজান ভাটি - শিল্পী চক্রবর্তী
* ১৯৯৮ - ভালবাসার ঘর - মোতালেব হোসেন
* ১৯৯৯ - তোমার জন্য পাগল - শিল্পী চক্রবর্তী
* ২০০১ - মেঘলা আকাশ - নারগিস আক্তার
* ২০০১ - রংবাজ বাদশা - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০০১ - জামাই শ্বশুর - দেবাশীষ বিশ্বাস
* ২০০৩ - কঠিন সীমার - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০০৪ - ভাইয়ের শত্রু  ভাই - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০০৭ - ডাক্তার বাড়ী - আজিজুর রহমান
* ২০০৭ - বউয়ের জ্বালা
* ২০০৭ - বাদশা ভাই এলএলবি
* ২০০৮ - তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা
* ২০০৮ - সন্তান আমার অহংকার
* ২০০৯ - অভিশপ্ত রাত
* ২০০৯ - আইনের হাতে গ্রেফতার
* ২০০৯ - চিরদিন আমি তোমার
* ২০০৯ - ঠেকাও আন্দোলন
* ২০০৯ - বাবা ঠাকুর
* ২০০৯ - বিয়ে বাড়ী
* ২০০৯ - ভণ্ড নায়ক
* ২০০৯ - ভালবাসা দিবি কিনা বল

* ২০১১ - কে আপন কে পর - শাহীন-সুমন - (প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র)

* ২০১২ - ভালোবাসার রঙ - শাহীন-সুমন (খল চরিত্রে প্রথম)
* ২০১৩ - প্রেম প্রেম পাগলামি
* ২০১৩ - অন্যরকম ভালোবাসা -শাহীন-সুমন
* ২০১৩ - ফুল এন্ড ফাইনাল - মালেক আফসারী
* ২০১৩ - তবুও ভালোবাসি - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০১৪ - দাবাং - আজাদ খান
* ২০১৪ - জিরো থেকে টপ হিরো
* ২০১৪ - মনের মধ্যে লেখা
* ২০১৪ - ফাঁদ - শফি উদ্দিন
* ২০১৪ - হিরো: দ্যা সুপার স্টার - বদিউল আলম খোকন
* ২০১৫ - এইতো প্রেম - সোহেল আরমান
* ২০১৫ - বোঝেনা সে বোঝেনা - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০১৫ - অগ্নি ২ - ইফতেখার চৌধুরী
* ২০১৫ - পদ্ম পাতার জল - তন্ময় তানসেন
* ২০১৫ - মার্ডার ২
* ২০১৫ - অন্তরঙ্গ
* ২০১৫ - চিনি বিবি
* ২০১৬ - নেহাল দত্ত, ওয়াজেদ আলী সুমন
* ২০১৬ - রক্ত - ওয়াজেদ আলী সুমন
* ২০১৬ - শিকারি - জয়দীপ মুখার্জী
* ২০১৬ - বসগিরি - শামীম আহমেদ রনি
* ২০১৬ - ধূমকেতু - শফিক হাসান
* ২০১৬ - রাজা ৪২০
* ২০১৭ - ক্রাইম রোড - সাইমন তারিক
* ২০১৭ - মায়াবিনী - আকাশ আচার্য্য
* ২০১৭ - সুলতানা বিবিয়ানা - হিমেল আশরাফ
* ২০১৭ - নবাব - জয়দীপ মুখার্জী
* ২০১৭ - বস ২ - বাবা যাদব
* ২০১৭ - রাজনীতি - বুলবুল বিশ্বাস
* ২০১৭ - রংবাজ - আব্দুল মান্নান
* ২০১৭ - দুলাভাই জিন্দাবাদ - মনতাজুর রহমান আকবর
* ২০১৯ - বয়ফ্রেন্ড
* ২০১৯ - ডনগিরি - শাহ আলম মন্ডল
* ২০২০ - শাহেনশাহ - শামীম আহমেদ রনি
* ২০২২ - বিদ্রোহী - শাহীন-সুমন

হাঙ্গামা/সানজানা
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url